বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

আমতলী প্রতিনিধি

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ আমতলী পৌরবাসী। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো এবং ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়। প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নীরব ঘাতক ভয়ানক ক্ষতিকর শব্দ দূষণ থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন নাগরিকের। জানা  গেছে, আমতলী পৌর শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ডিজেল ও পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পু, অটো রিকশা, অটো গাড়ি, টমটম মাহেন্দ্র ও থ্রি-হুইলারের হাইড্রোলিক হর্ন ও ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দ দূষণ হয়। এছাড়াও রোগিদের আকৃষ্ট করতে চিকিৎসকের নামে প্রচার, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বয়লার মুরগি, মাছ, মাংস বিক্রিসহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। এতে পৌর শহরে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। শব্দ দূষণের কারণে মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, মাথা ধরা, বদ হজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ উল্লেখ আছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়। এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এ সব নিয়মনীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন আমতলী পৌর শহরে মাইকে প্রচার ও বিভিন্ন গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন অহরহ বেজে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক শব্দ দূষণ হচ্ছে। পৌরবাসীকে শব্দ দূষণ শেষে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। বরগুনা জেলা পরিষদ সদস্য ও আমতলী পৌরসভার সচেতন নাগরিক অ্যাডভোকেট আরিফ উল-হাসান আরিফ বলেন, পৌর শহরে অহরহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে বসবাস করা খুবই দুরূহ। শব্দ দূষণের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পৌর শহরের অতিরিক্ত মাইকিং হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দূষণরোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে শব্দ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। আমতলী উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল মুনয়েম সাদ বলেন, শব্দ দূষণের কারণে শ্রবণ শক্তি ও মেমোরি কমে যায়। কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের কারোনারি হার্ট ডিজিজ, কণ্ঠনালির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, নিন্দ্রাহীনতা, আলসার ও মস্তিকের রোগ হতে পারে।

সর্বশেষ খবর