বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধ ১০ প্রাথমিক বিদ্যালয় খুপরি ঘরে পাঠদান

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

জলাবদ্ধ ১০ প্রাথমিক বিদ্যালয় খুপরি ঘরে পাঠদান

অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের করার কারণে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি খরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১০ প্রাথমিক বিদ্যালয়। পানিতে তলিয়ে আছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। খরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনসহ এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়িও রয়েছে পানির নিচে। মূল ভবনসহ শৌচাগার ও টিউবওয়েল পানিতে নিমজ্জিত। রাস্তার পাশেই একটি ছোট জায়গা বাঁশের চটা দিয়ে ঘিরে ও গোলাপাতার ছাউনির মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলছে পাঠদান। এক ঘরের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ অপর চারজন শিক্ষক অবস্থান করছেন। খুপরি ঘরের সঙ্গে বাঁধা বাঁশের খুঁটিতে বাতাসে উড়ছে জাতীয় পতাকা। গত দুই মাস ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে বিদ্যালয়ের ৬৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। খরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, মূল ভবনসহ শৌচাগার ও টিউবওয়েল পানিতে নিমজ্জিত। খুপরি ঘরের মধ্যে কোনো রকমে চলছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম। একই ঘরের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ অপর চারজন শিক্ষক অবস্থান করছেন। স্কুলের শিক্ষার্থী রোজ মণ্ডল, জুবাইদা সুলতানা যুথী জানান, পানিতে মূল ভবন জলমগ্ন রয়েছে। তাদের বাথরুম ও টিউবওয়েল পানির ভিতরে। করোনাকালীন দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের ক্লাস চলছে বিদ্যালয়ের মূল ভবনের সামনে রাস্তার পাশে। জায়গার স্বল্পতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলেমিশে একঘরে থাকতে হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ জাকির হোসেন জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে কপোতাক্ষ নদ ঠিকই খনন হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের করার কারণে তালা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বিদ্যালয়ের ভবনসহ এলাকার বাড়িঘর বছরে তিন থেকে চার মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। স্কুল ভবন ও টয়লেট পানিতে তলিয়ে থাকায় প্রস্রাব-পায়খানার জন্য দূরবর্তী বাড়িতে যেতে হয়। বেশি সমস্যায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যা আর কত মাস তাদের সইতে হবে তা কেউ বলতে পারেন না। বেহাল পরিস্থিতিতে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র রায় জানান, অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও ভবানীপুর খালের পাশে বাঁধ দেওয়ায় বারাত বিলের পানি সরতে পারছে না। মৎস্য ঘেরের কারণে বিদ্যালয়ের সামনে থেকে মোহনা বাজার যাওয়ার রাস্তাটিও সরু হয়ে গেছে। হেঁটে যাওয়াই দুষ্কর। প্রশাসনিকভাবে পানি নিষ্কাশন ও অবৈধভাবে খালে বাঁধ দিয়ে মাছচাষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তালা উপজেলার  খরাইল সরকারি প্রাথমিক, শালিখা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঠবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাবাধাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সমনডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে লেখা পড়ার কোনো পরিবেশ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর