রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সোনালি হয়ে উঠছে শীষ ধান কাটার প্রস্তুতি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

সোনালি হয়ে উঠছে শীষ ধান কাটার প্রস্তুতি

হালকা বাতাসে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি ধানের শীষ দোলা খাচ্ছে। অনেক খেতের ধানের শীষ ইতিমধ্যে সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে সোনালি হয়ে উঠছে। গন্ধে ভরে উঠেছে সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গ্রামীণ জনপদ। আর কয়েক দিন পরেই শুরু হবে ধান কাটা, মাড়াই নতুন ধান ঘরে তোলার মহোৎসব। তাই প্রতিটি কৃষক পরিবারের কৃষকদের চোখে-মুখে লেগে আছে সোনালি স্বপ্ন পূরণের ছাপ। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠজুড়ে সোনালি কাঁচা-পাকা ধানের ফসলি খেত যেন দিগন্ত ছুঁয়ে গেছে। কৃষকের ঘরে ঘরে শুরু হবে ধান তোলার পালা। তাই ধান কাটার জন্য নতুন কাস্তে তৈরি করতে দিয়েছেন অনেকে। কেউ আবার পুরাতন কাস্তে মেরামত করাচ্ছের কামারবাড়িতে। কেউ কেউ নতুন ধান উঠানে রাখার জন্য বাড়ির আঙ্গিনা সুন্দরভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। এ জনপদে কৃষকের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। তবে ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের আনাগোনা আর তৎপরতায় ফসলের কাক্সিক্ষত মূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় দুটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা। এর আয়তন ৪৯২.১২২ বর্গ কিলোমিটার। ৩৫ হাজার ৫০০টি কৃষক পরিবার রয়েছে। এ বছর ৩৩ হাজার ৭২৮ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষক। এর মধ্যে ২৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে উফশী ও ৮ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন কৃষক। স্থানীয় কৃষক জানান, খেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। করোনার কারণে ধান কাটার জন্য দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এখন আবহাওয়া ও বাজারে ধানের দাম ভালো থাকলেই পুষিয়ে যাবে- এমনটাই বলেছেন কৃষক। উপজেলার চাম্পাপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. মোহসিন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর চাষাবাদে কিছুটা বিঘ্ন হয়েছে। তিনি প্রায় তিন হেক্টর জমি জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এতে ৩০০ মণ ধান পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক মো. হাবিব মুন্সি বলেন, তিনি প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এখন খেতের ধান পাকা শুরু করেছে। খেতে খুব একট ভালো ফসল হয়নি। তার পরও ২০০ মণ ধান পাবেন। তবে ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে এই কৃষক। অপর এক কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, সার-ওষুধ প্রয়োগ ও খেতের নিয়মিত পরিচর্যা করে এ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। শ্রমিক পাওয়া গেলে দুই-চার দিনের মধ্যেই খেতের ধান কাটবেন বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এ উপজেলায় কৃষকদের মাঝে ১০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এটি দিয়ে খেতের ধান খুব অল্প সময়ে একই সঙ্গে কাটতে ও মাড়াই করা করতে পারবেন কৃষক। এ ছাড়া উচ্চ ফলনশীন জাতের ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। আর মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রেখেছে উপ-সহকারী কর্মকর্তারা। এর ফলে আমন ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষক কাক্সিক্ষত ফসল সুন্দরভাবে কাটতে পারবেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর