রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রংপুরে উপহারের নামে যৌতুক

মধ্যবিত্ত পরিবারের পছন্দ মোটরসাইকেল নিম্নবিত্তের অটোরিকশা

নজরুল মৃধা, রংপুর

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই বছর বিয়ে অনেকটাই কমে গিয়েছিল। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় আবার বেড়েছে বিয়ে। যৌতুকবিরোধী আইন থাকলেও রংপুর অঞ্চলে থেমে নেই এই প্রথা। উপহারের নামে চলছে যৌতুক। মধ্যবিত্ত পরিবারের বরপক্ষের প্রথম পছন্দ মোটরসাইকেল এবং নিম্নবিত্তের অটোরিকশা (চার্জার ভ্যান)। বিশিষ্টজনরা বলছেন, উপহারের নামে এসব দেওয়া-নেওয়া আইনত অপরাধ। নগরীর একজন রাজমিস্ত্রি। তিনি কয়েক দিন আগে তার মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বর শ্রমিক। বরপক্ষের দাবি জামাইকে একটি অটোরিশা দিতে হবে। দাবি অনুযায়ী তিনি জামাইকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় অটোরিকশা কিনে দিয়েছেন। নগরীর শাপলা চত্বর ও সাতমাথা এলাকার দুই কর্মজীবী শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার হিসেবে নিয়েছেন অটোরিকশা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক যুবক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে তিনি উপহার পেয়েছেন আড়াই লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল। উপহারের নামে এমন যৌতুক প্রথা চলছে জেলার অধিকাংশ বিয়েতে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলায় মোট জনসংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে যুবক-যুবতীর শতকরা হার ২৩ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, রংপুরে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪৫টি মোটরসাইকেল এবং ৫০টির মতো অটোরিকশা বিক্রি হয়। এর ৫০-৬০ শতাংশই যৌতুক হিসেবে দেওয়ার জন্য কেনা হয়। রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবদুল জলিল বলেন, পণপ্রথার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। আইন করেও এ প্রথা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরপক্ষ বিয়ের সময় উপহার হিসেবে মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ অন্যান্য সামগ্রী উপহার চাচ্ছে-যা মোটেও শোভনীয় নয়। জেলা সুজনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, পণ হিসেবে জামাইকে মোটরসাইকেলসহ অন্য সামগ্রী প্রদান কালচারে পরিণত হয়েছে।

আইন করেও এটি দমন করা যাচ্ছে না। এর জন্য প্রয়োজন ছেলে ও মেয়ে পক্ষের সচেতনতা। রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকে জামাইকে যৌতুক দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেল কিনছেন। তিনি মনে করেন মোটরসাইকেল কিংবা অন্য যে কোনো সামগ্রী দেওয়া-নেওয়া দুটিই অপরাধ।

 

সর্বশেষ খবর