সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শহরবাসীর গলার কাঁটা রেলগেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

শহরবাসীর গলার কাঁটা রেলগেট

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ জংশন বগুড়ার আদমদীঘির ‘সান্তাহার স্টেশন’। এ স্টেশনটি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে হওয়ায় পৌরবাসীকে যেন দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। প্রতিদিনের সৃষ্ট যানজটের কারণে রেলগেট অতিক্রম করে একপাশের মানুষ আরেক পাশে যেতেই ভয় করেন। রেলগেটটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টায় বন্ধ রাখা আর ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন শহরবাসী। এটি নিরসনে বিভিন্ন দফতরে বহুবার আবেদন করলেও এখনো কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কর্তাব্যক্তিরা। তবে সর্বশেষ এটি সমাধানের জন্য স্থানীয় এমপি রেলমন্ত্রীর কাছে দাবি উত্থাপন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সান্তাহার জংশন স্টেশন হয়ে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনে আন্তঃনগর, সাধারণ, মেইল ও মালবাহী মিলে প্রতিদিন প্রায় ৪৫ টির মতো ট্রেন চলাচল করে থাকে। এসব ট্রেন আদমদীঘি, আক্কেলপুর ও রাণীনগর স্টেশন থেকে ছাড়ার সময় সান্তাহার রেলগেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেনগুলো রেলগেট অতিক্রম না করা পর্যন্ত গেটব্যারিয়ার ফেলে রাখা হয়। এতে পাশর্^বর্তী এসব স্টেশন থেকে সান্তাহারে ট্রেনগুলো পৌঁছতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে। প্রতিটি ট্রেন গড়ে ১৫ মিনিট করে বন্ধ থাকলে ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ১১ ঘণ্টার মতো বন্ধ থাকে। ফলে প্রতিদিনই সান্তাহার রেলগেট চত্বরে যানজটের কবলে পড়ছেন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, অ্যাম্বুলেন্স, ট্রেনযাত্রী, পণ্যবাহী, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও ছোট-বড় যানবাহনসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। এ নিয়ে গত ১১ নভেম্বর সান্তাহার স্টেশনের আধুনিকায়ন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার। রেলগেটের যানজট নিরসনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের কাছে একটি ফ্লাইওভার ব্রিজের দাবি জানান। এ সময় মন্ত্রী তাঁর দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করতে বলেন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি আদমদীঘি থানা পুলিশের আয়োজনে ‘ওপেন হাউস ডে’ অনুষ্ঠানে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী রেলগেট চত্বরের যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যানজট সৃষ্টি হলে পুলিশ সদস্যদের দিয়ে নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা না থাকায় আমরা সমস্যায় পড়ি। এ সমস্যার কথা আমরা এসপি স্যারকে জানিয়েছি। তিনি শিগগিরই হয়তো ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আমি আশাবাদী।’ সান্তাহার পৌরসভার প্যানেল মেয়র জার্জিস আলম রতন জানান, পৌর শহরের মালগুদামের সামনে দিয়ে একটি সড়ক বের করে পান্নার মোড় এবং পরবর্তীতে পোঁওতা রেলগেট পর্যন্ত নতুন সড়ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সড়কের পাশ দিয়ে একটি ড্রেনও নির্মাণ করা হবে।

এতে যানজট কিছুটা হলেও নিরসন হবে বলে আমি মনে করি। রেলগেট চত্বরের ভ্যানচালক জালাল, শফির উদ্দীন এবং অটোরিকশা চালক স্বপন হোসেন ও জাহিদুল বলেন, রেলগেটটি বন্ধ থাকায় জরুরি মালামাল ও যাত্রী বহন করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া যেখানে পায়ে হেঁটে চলাচল করায় কঠিন সেখানে গাড়ি চালানোর কথা চিন্তা করা যায় না। রেলগেটটি যেন আমাদের শহরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই যানজট থেকে মুক্তি চাই। সান্তাহার জংশনের স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম ডালিম জানান, রেল জংশনের জন্য সান্তাহার একটি জনগুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিদিন বহু মানুষের আনাগোনা এখানে। এ ছাড়া আগের তুলনায় এই পথে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে এখন  রেলগেট বন্ধ রাখার সময়ও বৃদ্ধি হয়েছে। আর এ কারণেই প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে জরুরি ভিত্তিতে একটি ফ্লাইওভার ব্রিজ ও স্পেশাল গেট হওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর