সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আমনের বাম্পার ফলন

হিলি প্রতিনিধি

আমনের বাম্পার ফলন

দিনাজপুরের হিলিতে চলতি আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকরা। এবার ধান খেতে নানা  পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় উৎপাদন খরচ ওঠায় দারুণ খুশি কৃষক। এদিকে বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকলে ধানের দাম ১৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এতে করে বাড়তি লাভ হবে কৃষকের আশা ধান ব্যবসায়ীদের। হিলির বৈগাম গ্রামের কৃষক আনছার আলী বলেন, এবারে একে তো ধান রোপণের সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ দিয়ে ধান রোপণ করতে হয়েছিল। পরে অবশ্য আকাশের পানি হওয়ায় ঠিকমতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় ধানের গাছ খুব ভালো হয়েছিল। তবে ঠিক যখন গাছে ধান বের হবে  সে সময় মাজরা পোকা ও লক্ষ্মিরগু এর আক্রমণ দেখা  দেয় এতে করে ধানের ফলন নিয়ে আমরা কৃষকরা খুব চিন্তায় ছিলাম। কৃষি অফিসের পরামর্শ  মোতাবেক কীটনাশক ব্যবহার কওে সেই অবস্থা  থেকে কেটে উঠেছি। এখন ধান পেকে গিয়েছে ইতিমধ্যেই কর্তন শুরু করে দিয়েছি তাতে করে ধানের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এমন ধানের ফলন বিগত বছরেও পাওয়া যায়নি। গতবার  যেখানে বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২মণ করে ধানের ফলন হয়েছিল এবার সেখানে গড়ে ১৪ থেকে ১৫ মণ (৩৩ শতক) বিঘা প্রতি ধানের ফলন হচ্ছে। আর ধানের দাম বেশ ভালো রয়েছে গত বছর সাড়ে ৯০০ টাকা মণ ধান বিক্রি করলেও এবার শুরুতেই ১ হাজার ৫০টাকা করে ধানের মণ চলছে আরও ধানের দাম বাড়তে পারে। আমাদের বিঘা ধান  রোপণ থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত সাড়ে ৮ হাজার টাকা বা তার কিছু বেশি লেগেছে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে খরচ বাদ দিয়ে আমরা  বেশ লাভবান হচ্ছি। একই গ্রামের অপর কৃষক শফিউল আলম বলেন, ধানের ভালো ফলন ও দাম ভালো পেলেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমাদের লাভের ভাগ কমে গিয়েছে খরচের ভাগ  বেড়েছে। তেলের দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ধান মাড়াই করতে বেশি খরচ হচ্ছে আগে যেখানে ৫০০ টাকা বিঘা ধান মাড়াই করেছি এবারে তা বেড়ে ৭০০ টাকা হয়েছে। এর ওপর জমিতে চাষ করতে বেশি খরচ লাগছে, আগে  যেখানে চাষ দিতে ৩০০ টাকা বিঘা লাগত এখন তা  বেড়ে সাড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে একমাত্র তেলের দাম বাড়ার কারণে। এর ওপর এবারে ধানে পোকার আক্রমণ লক্ষণীয় ছিল আগে যেখানে দুবার থেকে তিনবার কীটনাশক দিলেও এবারে পাঁচ থেকে ছয়বার কীটনাশক দিতে হয়েছে এর কারণে আমাদের বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে।

এর পরেও আমরা ধানের দাম ভালো থাকায় লাভবান হব বলে আশা করছি। তবে জ্বালানি তেলের দামের বিষয়ে কৃষকের দিক বিবেচনা করে সরকার যেন অবশ্যই তেলের দামটা কমায়। হিলির ছাতনি চারমাথা মোড়ের ধানের আড়তদার রওশন হোসেন বলেন, গত বছরে প্রথমের দিকে ধানের দাম ছিল ৯০০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা পর্যন্ত ছিল।

 কিন্তু এবারে প্রথম থেকেই ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৬০/৭০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা চলছে। ধানের ভালো আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া এবারে ধানের মান বেশ ভালো রয়েছে। এসব ধান দেশের বিভিন্ন স্থানে অটো রাইস মিলগুলোতে সরবরাহ করা হয়। সামনের দিকে ধানের দাম আরও বাড়তে পারে। ১১০০ টাকা ছাড়াতে পারে ধানের দাম। ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে সরকার যদি এলসির মাধ্যমে চাল আমদানি বন্ধ রাখে তাহলে গতবার যেমন শেষ সময়ের দিকে ১৩০০ টাকা উঠে গিয়েছিল এবারও তা ১৩০০ টাকার উপরে উঠতে পারে এতে কৃষকরা আরও লাভবান হবে বলে আশা করছি। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, চলতি  মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় ৮ হাজার ১৫৫  হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ধান কর্তন শুরু হয়েছে, এ পর্যন্ত ছয় হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে ধানের কর্তন  শেষ হয়েছে যা মোট আবাদের ৭০ ভাগের মতো। বিগত বছরের চেয়ে এবারে ধানের ভালো ফলন হয়েছে, কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে করে কৃষকরা যেমন খুশি তেমনি আমরাও অনেক আশাবাদী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর