শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্বাচনী প্রচারণায় উৎসবের আমেজ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

নির্বাচনী প্রচারণায় উৎসবের আমেজ

তৃতীয় ধাপে লক্ষ্মীপুরে একটি পৌরসভা ও ২০টি ইউপিতে আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে এখন শেষ মুহূর্তের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমালোচনায় ভোটের উত্তাপও ছড়ানো হচ্ছে কোথাও। ঘটছে সহিংসতার ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা চান ভোটাররা। এদিকে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় প্রশাসন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর পৌরসভা ও রায়পুর উপজেলায় ১০টি এবং রামগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউপিতে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীও সমর্থকরা। প্রার্থীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহরের অলিগলি ও গ্রাম। ২৮.২৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় বর্তমানে ওয়ার্ড সংখ্যা ১৫টি। কেন্দ্র সংখ্যা ২৮টি। বর্তমানে দেড় লাখ জনগোষ্ঠী বসবাস করছে এ পৌরসভায়। এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা ৭১ হাজার ৩২২ জন। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮০ জন, মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২০ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মোজাম্মেল হায়দার মাসুম, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাকির আল মামুন মোবাইল ফোন প্রতীক, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা জহির উদ্দিন হাত পাখা প্রতীক ও সিংহ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মোহাম্মদ আবদুর রহিম। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব প্রার্থী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে উঠান বৈঠক, পথসভা ও শোডাউন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এলাকার রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, মাদক, সন্ত্রাস রোধ, নারী অধিকার ও উন্নয়নসহ নানা সমস্যা তুলে ধরে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দিন-রাত নির্ঘুম প্রচারণাসহ ভোট প্রার্থনায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সবাই। স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসবের আমেজ নিয়ে যার যার ভোট করছে সবাই। কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলররাও ঘরে বসে নেই। সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারাও। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী সব প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাসুম বলেন, সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকার পক্ষে সাড়া দিয়েছে। বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, সুপেয় পানি, গ্যাস ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমাধানসহ জয়ী হওয়ার পর একটি মডেল পৌরসভা গঠন করে সব নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী জহির উদ্দিন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে হাতপাখা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। জয়ী হওয়ার পর মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত একটি পৌরসভা উপহার দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোবাইল ফোন প্রতীকের জাকির আল মামুনও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এদিকে ভোটাররা বলছেন, সুষ্ঠু পরিবেশ ফেলে সৎ যোগ্য ও সব সময়ই পাশে পাবেন এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চান তারা। এদিকে জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার ২০টি ইউপি নির্বাচনে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এসব ইউনিয়নের তিনটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীসহ তিনজন, সাধারণ সদস্য ও মহিলা সদস্য পদে ১১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ একাধিক প্রার্থী সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এসব ইউনিয়নে প্রচারণায় বাধাসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। একে অপরকে দুষছেন। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে রামগঞ্জ ও রায়পুরে। নির্বাচনী কার্যালয়ও ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। ভাদুর, চন্ডিপুর ও দক্ষিণ চরবংশী, কেরোয়া ইউনিয়নে ভোটের উত্তাপ চলছে। এসব ইউনিয়নে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে। এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ এ পর্যন্ত ২৭ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দল সূত্রে জানা গেছে। জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী এলাকায় এখনো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিরাজ করছে। কেউ বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ তৎপর রয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।  জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে কাজ করছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেই জরিমানা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৫ জন প্রার্থীর জরিমানা করায় পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। প্রার্থীদের সঙ্গে সভা করে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান করতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

সর্বশেষ খবর