রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আমতলীতে ধান খেতে ইটভাটা!

আমতলী প্রতিনিধি

আমতলীতে ধান খেতে ইটভাটা!

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরগুনার আমতলী-তালতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লোকালয়ে ও ধান খেতে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ইটভাটার অতিরিক্ত তাপমাত্রায় প্রভাবে পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে । স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা অবৈধভাবে ইটভাটা বন্ধের কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।  জানা গেছে জেলার দুই উপজেলা আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমিতে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ২১টি ঝিকঝ্যাঁক ও ড্রাম চিমনি ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ দ্রুতগতিতে শুরু হয়েছে। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি ইটভাটার স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে অনেক ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করছে। গ্রাম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে পরিবেশগত বিপর্যয় জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশঙ্কা করেছে পরিবেশবাদীরা। কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে এবং ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। এদিকে ইটভাটা নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসক অফিস ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হলেও অধিকাংশ ভাটায় এ সব ছাড়পত্র নেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রভাবশালীরা ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে ইটভাটার এক মালিক প্রভাবখাটিয়ে সেকান্দারখালী এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধ সংলগ্ন স্থানে ধান খেত ও লোকালয়ে ইটভাটায় ইট পোড়াচ্ছেন। এতে ওই এলাকার পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও ফসলী জমি ধংস হয়ে যাচ্ছে। আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন ও তালতলী উপজেলার ছোটবগী, কড়ইবাড়ীয়া ইউনিয়নে ২১টি ঝিকঝ্যাঁক ও ড্রাম চিমনিতে ইট পোড়ানোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। জেলা প্রশাসক দফতর সূত্রে জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ১০টি ইটভাটা রয়েছে। গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আমতলী সদর ইউনিয়নের মহাসড়কের পাশে র‌্যাব, জিমি, এসইউএবি ও এমএসবি চারটি ঝিকঝ্যাঁক ইটভাটায় ধান খেতের মধ্যে ঝিকঝ্যাঁকের চুল্লীতে ইট তৈরির কাজ চলছে। আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের বাদুরা নামক স্থানের ধান খেতের পাশে ঢাকা ব্রিকস ঝিকঝ্যাঁক ইটভাটার ইট পোড়াচ্ছে। কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে ধান খেত ও লোকালয়ে বিবিসি নামের একটি ব্রিকস ইট পোড়ানো হচ্ছে। কল্যাণপুর গ্রামের আবদুল বারেক বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করায় যেমন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে অনেক গাছপালা মরে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ধান খেত ও লোকালয়ে প্রভাবশালীরা ইটভাটা নির্মাণ করায় ফসলি জমি ও পরিবেশ নষ্ট করছে। তারা আরও বলেন, ইটভাটার কারণে এ বছর তেমন জমিতে ধান ফলেনি। অনেক জমির ধান পুড়ে গেছে। দ্রুত ফসলি জমি রক্ষায় ইটভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানান তারা।  চালিতাবুনিয়া গ্রামের কয়েকজন বলেন, চারিপাশে ধান খেত। ভিতরে ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। তারা আরও বলেন, ইটভাটায় অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অনেক জমি পুড়ে গেছে। আবার অনেক জমিতে তেমন ফসল হয়নি। কৃষি জমি রক্ষায় দ্রুত ওই ই্টভাটাগুলো অপসরণ করা প্রয়োজন। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম পাঁচটি ইটভাটায় ছাড়পত্র দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কৃষি জমি এবং ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল কার্যালয়ের পরিচালক হালিম মিয়া বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটাসহ কোনো ধরনের শিল্পকারখানা নির্মাণ করতে পারবে না। পরিবেশ অধিদফতরের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ যদি ইটভাটা নির্মাণ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর