মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

লাভের হ্যাটট্রিক করল মধ্যপাড়া পাথর খনি

তিন বছরের লাভ ৬৭ কোটি টাকা

দিনাজপুর প্রতিনিধি

করোনার মধ্যেও উৎপাদন অব্যাহত থাকায় দেশের একমাত্র দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি টানা তিন অর্থবছরে মুনাফা করে হ্যাটট্রিক করেছে। গত ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মুনাফা করেছে পৌনে ৬৩ কোটি টাকা। মধ্যপাড়া খনিটি একমাত্র ভূ-গর্ভস্থ আগ্নেয়শিলা উৎপাদনকারী খনি হিসেবে দেশের পাথরের চাহিদা পূরণে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এ খনিটি কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। জার্মানিয়া- ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে রেকর্ড পরিমাণে পাথর উত্তোলন করার ফলে ধারাবাহিকভাবে টানা তিন অর্থবছরে খনিতে লাভের ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। করোনার মহামারীর মধ্যেও গত মাসের ২য় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মধ্যপাড়া পাথর খনি ১২ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন পাথর বিক্রি করে নিট মুনাফা করেছে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বলে জানানো হয়। এর আগে পাথর খনির বার্ষিকসভার তথ্য মতে, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে খনিটি মুনাফা করেছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে, ২২ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটিডের মহাব্যবস্থাপক (ইউজিওএন্ডএম) মো. আবু তালেব ফরাজী জানান, টানা তৃতীয়বার লাভের মুখ দেখেছে। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। দিন দিন বিভিন্ন সাইজের পাথরের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মে. টন।  উল্লেখ্য, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প নানা জটিলতা পেরিয়ে গত ২০০৭ সালের ২৫ মে বাণিজ্যিভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করে। দিন ও রাতে ৩ শিফটে দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু হলেও দৈনিক ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন শুরুই করতে পারেনি খনি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ৩ শতাধিক খনি শ্রমিক নিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করা হলে প্রতিদিন এক শিফটে পাথর উত্তোলন ছিল গড়ে ৬/৭ শত মেট্রিক টন। ফলে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ বছরে খনিটি লোকসানে পড়ে।

পরে খনির উৎপাদন বাড়িয়ে খনিটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকার ২০১৩ সালে ২ সেপ্টেম্বর জার্মানীয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় ৬ বছর মেয়াদী উৎপাদন, উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা এবং  রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করে।

জিটিসি খনিতে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ এবং যন্ত্রপাতি স্থাপন করে বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ দিয়ে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পাথর উত্তোলন শুরু করে। জিটিসি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ২য় এবং ৩য় শিফট চালু করে পাথর উত্তোলনের নয়া রেকর্ড গড়ে তোলে এবং পাথর খনিকে লোকসানের কবল থেকে উদ্ধার করে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখায়। খনির একটি সূত্র জানায়, জিটিসি’র সঙ্গে প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চুক্তির মেয়াদ ১ বছর বাড়ানো হয়। সেটির মেয়াদ শেষ হয় গত ২ সেপ্টেম্বর। জিটিসি’র সঙ্গে ৬ বছর মেয়াদে ২য় দফা চুক্তির আওতায় গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন চুক্তির আলোকে তারা পাথর উত্তোলন করছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়েও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পুরোদমে খনির উৎপাদন ও উন্নয়ন কার্যক্রম পুরোদমে চালায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। ফলে গত অর্থবছরে খনিটির মুনাফা বেড়েছে এবং লাভের ধারা অব্যাহত রাখাও সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে, জিটিসি পাথর  শ্রমিকদের উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত  সন্তানদের মধ্যে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান এবং খনির এলাকাবাসীর জন্য ডাক্তার দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায় ‘জিটিসি চ্যারিটি হোম’ স্থাপন করেছে।

সর্বশেষ খবর