মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শতাধিক ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব

আল-মামুন সাগর, কুষ্টিয়া

শতাধিক ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব

কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। তবে সরকারি হিসাব মতে, কুষ্টিয়া জেলায় ইটভাটার সংখ্যা ১৬২টি। যার মধ্যে মাত্র ২৬টির অনুমোদন রয়েছে। বাকি সব ইটভাটাই অবৈধ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। কোনো অনুমোদন নেই, নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। তবু কৃষি জমি দখল করে কুষ্টিয়া জেলায় একের পর এক ইটভাটা গড়ে উঠছে। সূত্র মতে, এ জেলায় প্রতি মৌসুমে অন্তত ৩ লাখ ১২ হাজার মে.টন কাঠ পুড়ছে। জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলার কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা তালিকাভুক্ত ১৬২টিসহ প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটার মালিকদের কেউই নিয়ম মেনে ভাটা স্থাপন করেননি। ভূমি জোনিং অ্যাক্ট-২০১০, কৃষি জমি সুরক্ষা আইন-২০১৫, পরিবেশ সুরক্ষা আইন-১৯৯৫সহ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনে আইনগত নীতিমালা-২০১৩ সবই লঙ্ঘিত হয়েছে জেলার সব ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করার কথা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতেই ইটভাটাগুলো চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইটভাটা মালিক জানান, জেলায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৬২টিসহ প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটায় এক মৌসুমে গড় ৫ রাউন্ডে ১৩০ দিন ধরে ইট পোড়ানো হয়। প্রতি ১টি ভাটায় দিনে ১৬ মে.টন কাঠ পুড়লে এক মৌসুমে কাঠ পুড়ছে ২০৮০ মে.টন। এ হিসাব অনুযায়ী বছরে জেলার সব ইটভাটা মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার মে.টন কাঠ পুড়ছে ভাটাগুলোতে। গত বছর থেকে কুষ্টিয়া জেলার অনেক ইটভাটা মালিক অভিনব এক কৌশল যোগ করেছেন। ইটভাটাতেই তারা ভ্রাম্যমাণ স মিল বসিয়েছেন। ইট পোড়াতে বড় বড় গাছের গুঁড়ি চিরে ভাটায় ফেলা হচ্ছে। সদর উপজেলার বেশ কটি ইটভাটা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। সদর উপজেলার এমএফবি ইটভাটার মালিক মহিদুল ইসলাম বলেন, কী করার আছে? কাঠ পোড়ানো বেআইনি, তবুও উপায় নেই। সবাই এভাবেই ইট পোড়াচ্ছেন। ভাটাগুলোতে বেআইনি কাঠ পোড়ানো হয় বলেই তো সবাই এসে সুবিধা নিয়ে যায়। ইটভাটার মালিকরা দাবি করেন জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে ইটের উৎপাদন ভালো হয়। কয়লায় পোড়ালে মোট ইটের তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। কয়লা ব্যবহারে সমানতালে ইট পোড়ে না। সে কারণে কাঠ পোড়ানো হয়। মিরপুর উপজেলার এমআরবি ইটভাটা মালিক শরিফুল ইসলাম মুকুল বলেন, এক গাড়ি কয়লা কিনতে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়।  একসঙ্গে নগদ এত টাকা দিয়ে কয়লা কিনে ভাটা চালানোর ক্ষমতা কারও নেই। তাছাড়া বেশি দামের কয়লা পুড়িয়ে এক রাউন্ডে যে উৎপাদন পাওয়া যায় তার চেয়ে সহজে কম দামের কাঠ পুড়িয়ে উৎপাদন বেশি পাওয়া যায়। তাই বেআইনি জেনেও তারা কাঠ পোড়াচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর