বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

তিস্তার চরে সবুজের বিপ্লব

আবদুল বারী, নীলফামারী

তিস্তার চরে সবুজের বিপ্লব

এক সময় গরু-ছাগলের বিচরণ ভূমি ছিল তিস্তা নদীর চর। তিস্তার মাছই ছিল চরের বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা। মাছ ছাড়া জীবিকার কোনো পথ ছিল না। মাছ ধরার পাশাপাশি কেউ কেউ ধান আবাদ করে সংসারের চাহিদা মেটাত। এখন সেই চরের জমি আর পতিত নেই। পাল্টে গেছে চরের দৃশ্যপট। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা রুপালি বালু চর এ শীত মৌসুমে ঢাকা পড়েছে সবুজের চাদরে। বন্যার ধকল কাটিয়ে শত শত কৃষকের ফসলের মাঠে চলছে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা। তবে ব্যাংক থেকে সুদবিহীন শস্য ঋণ না পাওয়ায় তাদের দ্বারস্ত হতে হয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। তাদের লাভের অংশ গিলে খায় দাদন ব্যবসায়ীরা। সবকিছু ঠিক থাকলে নীলফামারীর ডিমলা আর জলঢাকা উপজেলায় জেগে ওঠা তিস্তা নদীর ২৩টি চরে এ মৌসুমে উৎপাদন হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফসল। বর্ষায়  সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে তিস্তা। আবার শীত মৌসুমে বিশাল বালুর প্রান্তর হিসেবে ধরা দেয় সবার দৃষ্টিতে। তিস্তা এখন আর নদী নেই যেন বিস্তীর্ণ বালুচর। বর্ষায় ভাঙা আর শীতকালে গড়া- এই নিয়ে থাকতে হয় তিস্তাপারের মানুষদের। তিস্তার আশীর্বাদে বেঁচে থাকত অসংখ্য পরিবার। কিন্তু অনাকাক্সিক্ষত বন্যা আর অসম্ভব শুষ্কতার কারণে তিস্তার বুকে তারা আর আহার খুঁজে পায় না। অভাব, বন্যা, খড়া, শীতের মতো শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় সেখানে। কিন্তু তবুও তারা ছাড়তে পারে না তিস্তার কোল। ছাড়বেই বা কী করে। কারণ ওই পাড়ের সঙ্গে রয়েছে তাদের নাড়ির সম্পর্ক। গেল বন্যায় কাটা ধানসহ সহায়-সম্বল হারানো মানুষগুলো এখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভবনার ফসল উৎপাদনে। আর সেখানেই আগামীর স্বপ্ন বুনছেন নদীপারের মানুষ। চরগুলোতে ভুট্টা, সরিষা, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ প্রায় ১০ ধরনের ফসল চাষ করছেন কৃষকরা। ডিমলা আর জলঢাকা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানী, টেপাখরিবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই, গোলমু ।

া, ডাউয়াবাড়ী ও শৌলমারী ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ২৩টি চরে প্রায় ৩ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে এসব ফসল। তবে ডিজেল ও সারের দাম বেশি হওয়াসহ দাদন ব্যবসায়ীদের সুদ পরিশোধের পরে কাক্সিক্ষত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। উর্বর চরে স্বাচ্ছন্দ্যে বিভিন্ন ফসল ফলাতে সরকারি প্রণোদনা ও সুদবিহীন শস্যঋণের দাবি করেন। ঝুনাগাছ চাপানী চরের আজিজুল ইসলাম বলেন, গত আমন মৌসুমে হঠাৎ বন্যার কারণে ধান ঘরে তুলতে পারিনি। জমির ধান বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ভাত খাওয়ার মতো কোনো ধান ঘরে তুলতে পারিনি। ভুট্টা লাগানোর পর এখন সার আর তেলের দাম বেশি। কাটা-মাড়াইর সময় যদি ভুট্টার দাম না বাড়ে তাহলে এবারও আমরা মারা যাব। তার ওপর এই আবাদ করছি দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদের টাকা নিয়ে। নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গত বর্ষায় তিস্তার উজানের ঢলে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার দুটি বাঁধ ভেঙে ৮২৬ হেক্টর জমিতে পানি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে তাদের। কৃষকরা যেভাবে ফসলের পরিচর্যা করছে তাতে এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আশানুরূপ ফসল উৎপাদন হবে।

সর্বশেষ খবর