সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি সংকটেও বিভক্তি কাটেনি

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি সংকটেও বিভক্তি কাটেনি

দলীয় চেয়ারপারসনকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বেগম জিয়াকে দেশের বাহিরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সারা দেশের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করছেন। আগামীতেও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। কিন্তু মৌলভীবাজারের চিত্র ভিন্ন। দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সন্ধিক্ষণেও জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করছেন। যার কারণে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন মৌলভীবাজারে চাঙা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় অনেক কর্মসূচি এ জেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন হয়নি। দায়সারা কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দীর্ঘদিন যাবৎ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন বিভক্তিতে দলের ত্যাগী নেতারা নিষ্ক্রিয়। অঙ্গ সংগঠনেও এর প্রভাব পড়েছে। জানা যায়, গত মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের নেতৃত্বে তার বলয়ের নেতা-কর্মীরা সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এর আগে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে তার বলয়ের নেতারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। তখন উভয় বলয়ের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়া মুক্তির স্লোগান এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। এদিকে ৮ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেন। জানা যায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পরই দুই বলয়ে বিভক্ত হয়েছেন তাদের অনুসারীরা। জেলায় দলীয় কার্যক্রম নেই বললেই চলে। হোটেল কিংবা বাসাবাড়িতে ঘরোয়া আড্ডার মধ্যেই দলীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। দলের এ অবস্থা দেখে হতাশ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। এদিকে জেলা বিভক্ত হওয়ার পরপরই উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটিতেও এর প্রভাব পড়ছে। অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির সম্মেলনের আগে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির দুই গ্রুপের সমন্বয়ে এম নাসের রহমানকে সভাপতি, খালেদা রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক ও আবদুল মুকিতকে যুগ্ম-সম্পাদক করে ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন কমিটির অনুমোদন দেন। এরপর উভয় গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্র থেকে একাধিকবার নেতৃবৃন্দ মৌলভীবাজারে এলেও পরস্পরবিরোধী অবস্থানের হেরফের ঘটেনি। দীর্ঘ ৮ বছর দুই গ্রুপে বিভক্ত থাকার পর পুনরায় কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড ২০১৭ সালের ২৫ মে এম নাসের রহমানকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করেন। ৩ দিনের মাথায় আবার উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন মেরুকরণে বিভক্তি দানা বেঁধে। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জুতা মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সভাপতির অনুসারীরা। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্তির নিরসন ঘটে। কিন্তু কিছুদিন একত্রে সংসার করার পর ফের দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

সর্বশেষ খবর