বুধবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চাষিরা ব্যস্ত পিঁয়াজ আবাদে

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

চাষিরা ব্যস্ত পিঁয়াজ আবাদে

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল পিঁয়াজ খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকেই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে পিঁয়াজ চাষিরা ফের পিঁয়াজ আবাদ নিয়ে বেশ শঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু চাষিরা সেই শঙ্কা দূরে সরিয়ে দিয়ে নতুন করে ফের নেমে পড়েন পিঁয়াজ আবাদে। জেলার পিঁয়াজ নামকরা হওয়ায় এবং বাজারমূল্য অনেক বেশি থাকায় নতুন উদ্যমে খেতে নেমে পড়েন চাষিরা। পিঁয়াজ নিয়ে তাই নানা প্রত্যাশার কথা জানালেন ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের নাননু মিয়া। তিনি বলেন, প্রতি বছর নিজের ৬ বিঘা জমিতে পিঁয়াজ আবাদ করে থাকেন। তাতে তিনি তার সংসার ভালোভাবেই চালাতে পারেন। হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে পিঁয়াজ আবাদ করেন। এবার পানিতে পিঁয়াজ খেত নষ্ট হয়ে যায়। একবার মনে করেছিলেন আর পিঁয়াজ লাগাবেন না। কিন্তু পরক্ষণের মত পাল্টে গোটা জমিতেই পিঁয়াজের আবাদ করেছেন। বর্তমানে ফরিদপুর জেলার বিশেষ করে ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা, ফরিদপুর সদর ইউনিয়নের দিগন্তজোড়া মাঠে চলছে নতুন করে পিঁয়াজের আবাদ। ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মাঠের পর মাঠে শীত মৌসুমের সকালবেলায় শরীরে শীতের চাদর, মাথায় মাফলার, হাতে কাঁচি-কোদাল নিয়ে দলবদ্ধভাবে পিঁয়াজ চাষাবাদ করতে জমিতে নেমে পড়েছেন জমির মালিকসহ কৃষক। ভাঙ্গা উপজেলার মধ্যে ঘারুয়া, আলগী, চান্দ্রা, তুজারপুর, কালামৃধা, নাসিরাবাদ, মানিকদাহ, হামিরদী, চুমুরদী, আজিমনগর, কাউলীবেড়া ও নুরুল্যাগঞ্জ ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা পৌর সদর এলাকায় প্রতি বছরের মত বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে পিঁয়াজের আবাদ। ভাঙ্গা উপজেলায় মোট আবাদি জমির প্রায় ৯০ শতাংশ জমিতে পিঁয়াজ আবাদ করা হয়ে থাকে। এখন জমিতে পুরোদমে হালি পিঁয়াজ, কদম পিঁয়াজ, মুরিকাটা পিঁয়াজ রোপণের ধুম পড়ে গেছে। পিঁয়াজ আবাদকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বীজতলা আংশিক নষ্ট হয়। এতে করে পিঁয়াজ চাষাবাদ কাজে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। একই সঙ্গে তারা নতুন করে বীজতলা উৎপাদনেও বেশ নিরাশার মাঝে দোদুল্যমান হয়ে ওঠেন। কিন্তু বেশির ভাগ কৃষক পরিবার পিঁয়াজ চাষাবাদ কাজে জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ফলে তারা নতুন আশায় ফের বীজতলার কাজ শুরু করার পাপাশাশি পিঁয়াজের বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৯০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পিঁয়াজ এবং ৪৩৫ হেক্টর জমিতে দানা পিঁয়াজের আবাদ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৫ দিনে এর আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হালি পিঁয়াজ চাষাবাদ করেছে ভাঙ্গার পিঁয়াজ চাষিরা। ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ভাঙ্গায় পিঁয়াজের বীজতলার আংশিক ক্ষতি হলেও চলতি মৌসুমে পিঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের ২৩ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। তাছাড়া পিঁয়াজ চাষের ক্ষেত্রে পাতা পরা রোগ বিষয়ে সজাগ থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর