সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কুমড়াবড়ি তৈরির ধুম

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

কুমড়াবড়ি তৈরির ধুম

উত্তর জনপদের শস্য ও মৎস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে শীতের মৌসুম এলেই উপজেলার প্রতিটি গ্রামের নারীরা খাবারে বাড়তি স্বাদ আনতে কুমড়াবড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। আর তাই শীত জেঁকে বসায় নওগাঁর আত্রাইয়ের প্রতিটি গ্রামে কুমড়াবড়ি তৈরির যেন ধুুম পড়েছে। কুমড়াবড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় শীতকাল। শীতের সময় গ্রামের নারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। তার পরও নিত্যদিনের ছোট কাজও বেশি থাকে। এর মধ্যেই সব কাজের আগে সকাল বেলা কুমড়াবড়ি তৈরি করেন নারীরা। কুমড়াবড়ি তরকারির একটি মুখরোচক খাদ্য। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা। জানা যায়, উপজেলার শত শত নারী কুমড়াবড়ি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছে। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কুমড়াবড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের মাঝে। বর্ষাকাল বাদে বাকি মাসগুলোতে কমবেশি কুমড়াবড়ি তৈরি করা হয়। আর্শ্বিন মাস থেকে ফ্লাগুন এই ছয় মাস কুমড়াবড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীতকাল কুমড়াবড়ি তৈরির ভরা মৌসুম। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি কুমড়াবড়ি তৈরি করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করেন। শীতের সময় কুমড়াবড়ির চাহিদা থাকে বেশি আর গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়াবড়ি তৈরি করেন। কুমড়াবড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাষকলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়া। এর সঙ্গে সামান্য মসলা। বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর চাল কুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসেবে চালকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ক্রয় করা যায়। ৫ কেজি চাল কুমড়ার সঙ্গে দুই কেজি মাষকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়াবড়ি ভালো হয়। প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে জাঁতায় ভেঙে পরিষ্কার করে বা না ভেঙে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর ঢেঁকি বা শিলপাটা দিয়ে পিষে নিয়ে কুমড়াবড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তবে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়াবড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করা হচ্ছে। এরপর দুটির মিশ্রণে কুমড়াবড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়। রৌদ্র উজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙিনায় ভোর থেকে বড়ি তৈরি করা শুরু হয়।

পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানো হয়। কুমড়া বড়ি বসানোর পর দুই-তিন দিন একটানা রৌদ্রে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কম হলে তিন-চারদিন পর্যন্ত শুকাতে সময় লেগে যায়। শুকানোর পর কাপড় থেকে বড়ি উঠিয়ে পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। গ্রামের পিছিয়ে পড়া অনেক মেয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে শ্রম দিয়ে অনেক বছর ধরে এ কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের প্রায় ৩০-৪০টি পরিবার। ওই গ্রামের নারী কারিগর লতা মহন্ত বলেন, পাঁচ কেজি কুমড়ার সঙ্গে দুই কেজি মাষকলাইয়ের কুমড়া বড়ি ভালো তৈরি হয়। আগে মাষকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা, আর ঢেঁকিতে বা পাটায় বেটে বড়ি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম হতো। সেই সঙ্গে অনেক সময় লাগত। এখন খোসা ছাড়ানো মাষকলাই বাজারে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। মাষকলাই পানিতে ভিজিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে অল্প সময়ে বড়ি তৈরির মিশ্রণ তৈরি করা খুব সহজ হয়েছে। এতে করে অল্প সময় প্রচুর পরিমাণ কুমড়া বড়ি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এক কেজি কুমড়া বড়ি তৈরি করতে প্রায় ১২০ টাকা মতো খরচ হচ্ছে। আর বাজারে ২০০ থেকে আড়াই শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউছার হোসেন জানান, শীত মৌসুমে গ্রামের নারীরা কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছে। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর