সোমবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ফসলি জমির মাটি কাটার হিড়িক

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

ফসলি জমির মাটি কাটার হিড়িক

রাজনগর উপজেলার বাজুয়া খারপাড়া ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর দিয়ে ইটভাটায় মাটি নেওয়া হচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মৌলভীবাজারে ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব শুরু করেছেন। বন ও পরিবেশ আইন অমান্য করে রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে ইটভাটার মালিকরা দেদার মাটি কেটে নিচ্ছেন। জেলাব্যাপী ওপেন সিক্রেট ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হলেও নীরব ভূমিকায় মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইন অমান্য করে এস্ককেভেটর (ভ্যাকু) দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। ফসলি জমির মাটির বেশির ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে ইটভাটায়। আবার কেউ কেউ ঘরের ভিটাও ভরাট করছেন। ফলে ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হচ্ছে।

এদিকে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, আহমদনগর দাখিল মাদরাসার পাশে ইব্রাহিম ব্রিকস, আলীনগরে মহসিন ব্রিকস ও সাফারি ব্রিকস ফিল্ড স্থাপন করা হয়েছে।  মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৭০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫, রাজনগরে ৭, কমলগঞ্জে ১৩, শ্রীমঙ্গলে ৩, কুলাউড়ায় ১৭, বড়লেখায় ১৫, জুড়িতে ১টি ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অনেকটির লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ। আবার কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, উপজেলা সদর, কৃষি জমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ও ডিগ্রেডেড এয়ার শেড এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপন করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদারকি না করায় এমনটি হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সরেজমিন দেখা যায়, রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাজুয়া খারপাড়ার পূর্ব পাশে ফসলি জমি থেকে তিনটি এস্ককেভেটর দিয়ে প্রতিনিয়ত মাটি কেটে নিচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা। এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, কয়েক দিন ধরে ফরাজি ব্রিকফিল্ড ও এস কে, ব্রিকফিল্ড মাটি কেটে নিচ্ছে। এদিকে কুলাউড়া উপজেলার হিঙ্গাজিয়া, রবিরবাজার, বরমচাল, ভুকশিমইল, রাৎগাঁও, ব্রাক্ষণবাজার, পৃথিমপাশা ও জয়চন্ডি। সদর উপজেলার গিয়াসনগর, সরকার বাজারের করিমপুর ও মাতারকাপন। কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার, সিদ্ধেরসেরপুর, পলিতকুনা, দুর্গাপুর, বৃন্দাবনপুর, মরাজানের, সতিঞ্জিগাঁও, রামপুর ও হরিশরপুর এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত ইটভাটায় মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য মাটি জমা করা হচ্ছে। ইটভাটার মালিকরা দালালের মাধ্যমে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি ক্রয় করে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ লোভে পড়ে নগদ টাকার আশায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ৫/৭ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমিই ডোবায় পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিমত, প্রতি বছর শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে।

এলাকাবাসী জানায়, গ্রামীণ পাকা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক নির্মাণের দুই-এক বছরের মধ্যে তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে পরিবেশবিদ রিপন দে বলেন, প্রভাবশালীদের দিয়েই অভিযান শুরু করতে হবে। কিন্তু প্রশাসন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের অভিযানের বাইরে রাখে। মৌলভীবাজারের মতো জায়গায় এত ইটভাটার প্রয়োজন নেই। স্কুলের পাশ থেকে শুরু করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনেকেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইটভাটা স্থাপন করছেন। এ থেকে উত্তরণের জন্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর