খাল-নদী বেষ্টিত উপজেলা কক্সবাজারের পেকুয়া। উপজেলার উত্তরে ছনুয়া খাল, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেল, দক্ষিণে মাতামুহুরী নদী আর পুবে পেকুয়া পহরচাঁদা সীমান্ত খাল। এ ছাড়া পেকুয়ার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য নদ-নদী-খাল। প্রভাবশালীরা নদীর উৎপত্তিস্থলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ দুই পাশ দখল করে গড়ে তুলছে স্থাপনা। বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে নদী-খাল। ফলে দখল-দূষণে বিলুপ্ত হচ্ছে উপজেলার নদী ও খালগুলো। সরেজমিন দেখা যায় নদী দখল করে তৈরি হয়েছে বড় বড় স্থাপনা। পাউবো ও বন বিভাগ থেকে হাজার হাজার একর চর লিজ নিয়ে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলছে মাছের প্রজেক্ট, লবণমাঠ ও স্থাপনা। পানি চলাচলের মুখ বন্ধ করে মাছ ধরায় ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে নদী। মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। এতে দিন দিন নাব্য হারাচ্ছে নদী। পেকুয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় নদীতে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উপজেলা সদরের কহলখালী খালের। একসময়ের খরস্রোতা এ খালে এখন আর জোয়ার-ভাটা নেই। নদীর তলানিতে শুধু দূষিত কালো পানি আর বর্জ্য। উপজেলার বিভিন্ন নদীর দুই পাশের হাজার হাজার একর চর লিজ নিয়ে তাতে লবণমাঠ ও মাছের প্রজেক্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভরা যৌবনা নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। নদী ও খালে ময়লা-আবর্জনার কারণে একদিকে যেমন জলজপ্রাণী হুমকিতে পড়ছে, অন্যদিকে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) হাসেম বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি প্রশাসনের চোখের সামনেই দিনের পর দিন নদী দখল করে নিচ্ছে। কিছুদিন পর পেকুয়ায় আদৌ কোনো নদী থাকবে কি না সংশয় রয়েছে। সরকারের উচিত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদী-খাল দখলদারদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া।’ পেকুয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি অ্যাডভোকেট মীর মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদী অবিচ্ছেদ্য অংশ। তা ছাড়া কৃষিপ্রধান উপকূলীয় পেকুয়ার জন্য নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। দখলদাররা যেভাবে নদী গিলে খাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি পানির অভাবে জমিতে চাষাবাদ কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।’