সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

রোগমুক্তি কামনায় নারী-পুরুষের ঢল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বারো আওলিয়ার বাববাজারে ৫০০ বছরের পুরনো সুলতানি আমলের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে রোগমুক্তি কামনায় প্রতি শুক্রবার মানত করতে সহস্রাধিক শিশু, বৃদ্ধা ও নারী-পুরুষের, কেউ আসছেন মানত শোধ দিতে, কেউ আসছেন রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানত করতে, আবার কেউ আসছেন প্রিয় সন্তানের মুখে ভাত দিতে। জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বারোবাজারের বেলাট দৈলতপুরে অবস্থিত ইসলামী ঐতিহ্যের এক অনুপম মসজিদ।

পতিথ ইটের চিহ্ন প্রমাণ করে এটি সুলতানি আমলের দামি এবং নামকরা মসজিদ। মসজিদ           পরিদর্শনে গেলে বোঝা যায় ৫০০ বছর আগে এ কালীগঞ্জে বারোবাজার অঞ্চল কতটা সমৃদ্ধ ছিল।

চার গম্বুজ মসজিদটিতে প্রতিদিন অগণিত মানুষের সমাগম ঘটে। রোগমুক্তি কামনায় মানত দিতে এবং করতে আসা নারী-পুরুষের ইবাদত বন্দেগীর জন্য রয়েছে আলাদা সুব্যবস্থা। গোড়ার মসজিদে নামাজ পড়ে কোনোকিছু মানত করলে আল্লাহর রহমতে সেই আশা পূরণ হয় বলে জানান আগতরা। দীর্ঘ ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী ঝিনাইহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে অবস্থিত সুদৃশ্য গোড়ার মসজিদটি আজও খান-ই-জাহানের স্মৃতি বহন করে চলছে। এককালের জনবহুল ও প্রসিদ্ধ বারোবাজরের অসংখ্য প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের মধ্যে যে কয়েকটি মসজিদ এখনো দৃশ্যমান তার মধ্যে গোড়ার মসজিদ অন্যতম। অনেকে মনে করেন গোড়ায় নামক দরবেশের মাজার। বারোবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমদিকে বাজার পেরিয়ে কয়েকটি দোকান ও বসতবাড়ির পরই রাস্তার দক্ষিণে এ গোড়ার মসজিদটি এখনো টিকে আছে। প্রাচীন আমলের দিঘি ও ইটের ধবংসস্তূপ দেখে সহজেই অনুমান করা যায় বারোবাজার নগরটি এককালে হিন্দু ও বৌদ্ধ নরপতিদের রাজধানী ছিল। যে নগরীর দক্ষিণে অবস্থিত ভৈরব নদ এককালে ভয়ংকর ছিল। এ নদীকে কেন্দ্র করেই তৎকালে বারোবাজার হয়ে উঠেছিল পাক-ভারতের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র। এ নদীপথে দেশ-বিদেশের সওদাগররা পণ্যসামগ্রী আনত। এভাবেই যুগে যুগে রূপসী নগরী হিসেবে গড়ে ওঠে বারোবাজার। মুসলমান আমলে বারোবাজার আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। কথিত আছে মোহাম্মদ শাহের আমলে খান-ই-জাহান প্রথম বারোবাজর মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় যুদ্ধে অসংখ্য সৈন্য হতাহত হন। ১৮৮৩ সালে প্রত্নত্ত্বত বিভাগ কর্তৃক খননের পরে দেখা গেছে বারোবাজার এলাকার ঘনজঙ্গলে পূর্ণ ঢিবিগুলো খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে প্রাচীনকালের ইটের ভগ্নস্তূপ নরকংকাল ও মসজিদসহ অসংখ্য কীর্তি। সংরক্ষণের অভাবে এসবের অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এলাকার অনেক দালানঘরে পুরনো আমলের সেসব ইটের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কিছু মসজিদ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। মসজিদের ইমাম মাওলানা নাজমুস সাকিব জানান, আল্লাহর রহমতে আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে অনেকের মুখে রোগমুক্তির অনেক কথা শুনেছি। অনেকে বলেন, হুজুর আমার ক্যান্সার রোগ ছিল এখানে মানত করার পর আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে গেছি। তারপর খাশি, মুরগি জবাইসহ যে যা পারে রান্নাবান্না করে এখানে নিয়ে আসেন। এভাবে এখানে দিনের পর দিন লোকসমাগম বেড়েই চলেছে। ইসলামে মানতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, ইসলামে মানত করা জায়েজ আছে। এখানে যে মানতের টাকা আয় হয় তা দিয়ে মাদরাসার উন্নয়নের কাজ করা হয় এবং মাদরাসার এতিম ছাত্রদের খাওয়া-পরাসহ পড়ালেখা করানো হয়। আশপাশের যেসব গরিব মানুষ আছে তারাও এখানে এসে মানতের শিন্নি খেয়ে যায়। আমরা সব সময়  কোরআন সুন্নাহ মেনে চলি। কোরআন সুন্নাহর বাইরে এখানে কোনো কিছুই করা হয় না। এখানে যারা রোগমুক্তি কামনায় মানত করে আমরা তাদের জন্য দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি। কারণ আল্লাহ ছাড়া এখানে কারও দ্বারা কোনো কিছুই সম্ভব নয়। কেউ যদি তেল-পানি নিতে আসে তাহলে আমরা আল্লাহর কালাম পড়ে তেল- পানিতে ফু দিয়ে দিই। আমার জানা মতে অনেক রোগীর রোগমুক্তি হয়েছে বলে আমি জানি।

সর্বশেষ খবর