মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চরে শুকনা মরিচে রঙিন স্বপ্ন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

চরে শুকনা মরিচে রঙিন স্বপ্ন

বগুড়ায় শুকনা মরিচে স্বপ্ন দেখছেন যমুনা নদী এলাকার চরের চাষিরা। পরিবারের সদস্যরা মিলিয়ে খেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করে শুকিয়ে নেওয়ার কাজ করছে। কৃষি অফিস বলছে, শীত সবজিতে ভালো ফলনের পর এবার শুকনা মরিচে রঙিন স্বপ্ন দেখছে চাষিরা। উঠান থেকে শুরু করে জমি, খোলা মাঠ, খোলা স্থানে যে যেখানে পারছেন মরিচ শুকিয়ে হাটে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভালো ফলন হওয়ার কারণে মরিচ চাষির উঠান এখন লাল মরিচে লাল হয়ে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পেতে যাচ্ছে মরিচ চাষিরা। লাল মরিচের জন্য বগুড়া বাংলাদেশে বিখ্যাত। বগুড়ার মধ্যে যমুনা নদী বিধৌত সারিয়াকান্দির মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় এখানে মরিচের আবাদ বেশি হয়। সারা উপজেলার মরিচের খেতগুলোতে এখন পাকা লাল মরিচ শোভা পাচ্ছে।   জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার দক্ষিণ শংকরপুর, পূর্বধারাবর্ষা, পশ্চিম ধারাবর্ষা, কেষ্টিয়ারচর, কোমরপুর, চানবাড়ী, মাঝবাড়ী, কালাইহাটা, পৌতিবাড়ী, চর মাঝিরা, হাতিয়া বাড়ী, কালিয়ান, আওলাকান্দি, ভাংগারছের উত্তর বেণীপুর, দক্ষিণ বেণীপুর, মিঠনেরপাড়া, কাজলা, বাওইটোনা, কুড়িপাড়া, পাকেরদহ, উত্তর টেংরাকুড়া, দক্ষিণ টেংরাকুড়া, পাকুড়িয়া, ময়ুরেরচর, ট্যাকামাগুড়া, চর ঘাগুয়া, জামথল, বেড়াপাঁচবাড়িয়া ফাজিলপুর, বহুলাডাঙ্গা, চালুয়াবাড়ী, সুজালিরপাড়া, শিমুলতাইড়, তেলিগাড়ী, কাকালীহাতা, হরিরামপুর, ভাংগরগাছা, ধারাবরিষা, বিরামের পাঁচগাছী, হাটবাড়ী, দলিকা, মানিকদাইড়, কর্ণিবাড়ী, শনপচা, মুলবাড়ী, নান্দিনাচর, ডাকাতমারা, তালতলা, মিলনপুর, শালুখা, চর বাটিয়া, গজারিয়া, দারনা, হাটশেরপুর, ধনারপাড়া, শিমুলবাড়ী, চকরতিনাথ, করমজাপাড়া, নয়াপাড়া, কর্ণিবাড়ী, ধরবন্ধ, দিঘাপাড়া, ক্ষেপির পাড়াসহ ৬৯ টি চরে সর্বাপেক্ষা বেশি মরিচের চাষ হয়েছে। এসব চরের কৃষকরা বন্যার পানি নামার পর জমিতে দেশি মরিচের বীজ বপন করে এবং হাইব্রিড মরিচের চারা রোপণ করেছেন। দেশি এবং হাইব্রিড মরিচের গাছগুলোতে শোভা পাচ্ছে লাল মরিচ। কোনো কোনো মরিচের জমি হতে লাল মরিচ তোলা হচ্ছে। তোলার পর সেগুলো কৃষকের উঠানে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। শুকনো মরিচগুলো এখন কৃষকের উঠানে হাসছে।

 সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের শোনপচা চরের মামুন মিয়া জানান, প্রতিবছর মরিচের আবাদ করা হয়। এ বছর ৫ বিঘা জমিত মরিচ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ বিঘা জমিতে হাইব্রিড মরিচ করা হয়েছে। হাইব্রিড মরিচ বেশ কয়েকবার কাঁচা বিক্রি করা হয়েছে। দামও মোটামুটি ভালো পাওয়া গেছে। দেশি মরিচের গাছের মরিচ এখন পেকে যাচ্ছে। মরিচ শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করে এবার লাভ পাওয়া যাবে। বাওইটোনা চরের কৃষক বাদশা মিয়া জানান, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই জমিতে মরিচের আবাদ করছি। কয়েকদিন আগে মরিচের দাম কম ছিল। এখন মোটামুটি ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। মানিকদাইড় চরের সায়েদ ম ল জানান, ১০ বিঘা জমিতে তিনি মরিচের আবাদ করেছেন। পাকা মরিচগুলো জমি থেকে তুলে তিনি উঠানে শুকাতে দিয়েছেন। জানা যায়, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বগুড়ার বিস্তীর্ণ চর এলাকাজুড়ে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো পেয়ে বেশ খুশি চাষিরা। ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। পুরো বগুড়াতেই মরিচ ভালো জন্মে। তবে যমুনা নদী বিধৌত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ধনুট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ উৎপন্ন হয়।  মরিচ চাষি পরল গ্রামের লেবু মিয়া বলেন, এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। গত বছর প্রতি বিঘা মরিচ খেতে ৭৫-৯০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি হয়েছে। এ হিসেবে ৯ বিঘার একটি জমিতে আমার খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। গতকাল পাইকার পুরো জমির মরিচ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাম হাঁকিয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন আগে মরিচের দাম ভালো ছিল না। এখন আড়ত এ দাম একটু বাড়ায় মোটামুটি লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে। সারিয়াকান্দির মরিচের আড়তদার রফিকুল ইসলাম জানান, কাঁচা মরিচগুলো আমারা ক্রয় করে খুলনার দৌলতপুরে বিক্রি করি। লাল টোপা (পাকা) মরিচগুলো এ উপজেলায় স্কয়ার, প্রাণ, একমিসহ বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা কিনে নিয়ে যায়। গত শুক্রবার রাতে লাল টোপা মরিচ ১ হাজার টাকা মণ এবং কাঁচা মরিচ ৩০ হতে ৩১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সারিয়াকান্দির স্কয়ার কোম্পানির মরিচের ডিলার মোকছেদুল আলম জানান, প্রতি ৩ মণ লাল টোপা মরিচ শুকিয়ে ১ মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। বর্তমানে শুকনা মরিচের বাজার খুবই কম। এ বছর ৭ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে। এখন শুকনা মরিচের বাজার ৩ হাজার থেকে ৩১০০ টাকা মণ পর্যন্ত। জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত বছর উপজেলায় ৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৫৪২ মেট্রিকটন মরিচ উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর মরিচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৭০ হেক্টর অর্জন হয়েছে ৩৬২০ হেক্টর। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, এ বছর বন্যা কম হওয়ায় কৃষকরা আগামভাবে চরাঞ্চলে ফসল চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচ মোটামুটি ভালো হয়েছে। শুরুর দিকে কৃষকরা বাম্পার দাম পেয়েছেন। এখন মরিচের ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।

 

 

সর্বশেষ খবর