মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

হাইব্রিড ধানের আবাদ নিয়ে ব্যস্ত কৃষক

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

হাইব্রিড ধানের আবাদ নিয়ে ব্যস্ত কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। পাশাপাশি ধানের বাম্পার ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় বেজায় খুশি কৃষকরা। এজন্য স্থানীয় কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে ধান আবাদ করেছেন। তবে প্রচলিত ধান আবাদ করে কৃষকরা যখন খুব বেশি লাভের মুখ দেখতে পারছে না তখন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটর উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) ব্রি ধান আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। কৃষকরা এখন হাইব্রিড ধানে আশার আলো দেখতে পারছেন। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদে ফলন ভালো ও অন্য প্রচলিত ধানের চেয়ে বেশি হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে। স্থানীয় কৃষকরা জানায়, আগে যেখানে প্রচলিত ধান আবাদ করে বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ পাওয়া যেত এখন উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে তারা পাচ্ছেন ২২ থেকে ২৩ মণ ধান। এ ধান মানুষের জিঙ্ক ও প্রোটিন ঘাটতি মোকাবিলা এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বেশ সহায়ক হচ্ছে। জেলার আখাউড়ায় গত আমন মৌসুম থেকে এ মৌসুমে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ধান আবাদ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষ আবাদে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোপণকৃত জমির মধ্যে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমি উন্নত ফলনশীল হাইব্রিড জাতের বীজ রয়েছে। তবে এ মৌসুমে সরকার কর্তৃক প্রায় ২৫০ জন কৃষকের মধ্যে উন্নত ফলনশীল হাইব্রিড জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়।

উচ্চ ফলনশীল ধান বীজের মধ্যে রয়েছে ব্রি ৮৪, ৮১, ৬৩, ৮৮, ৯৬, সুবর্ণ, হীরা জাগরণীসহ নানা প্রজাতির ধান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান আবাদে জমি প্রস্তুত, চারা উত্তোলন ও রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ হালচাষ দিচ্ছেন, কেউবা জমির আইলে কোদালপাড়া কিংবা জৈবসার বিতরণে কাজ করছেন। কেউ দিচ্ছেন সেচ। উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কৃষক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ১৩ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। এর মধ্যে নয় বিঘা জমিতে তিনি উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করেন বলে জানান। প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান আবাদ করায় প্রতিবছর তার অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়। কারণ কৃষি উপকরণসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি ও ফলন কম হওয়ায় এ ক্ষতি হয়। তাই গত দুই বছর ধরে তিনি উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করায় অনেক লাভবান হচ্ছেন।

কৃষক মো. সবুজ মিয়া বলেন, প্রচলিত ধান আবাদ করলে বিঘাপ্রতি ১৩-১৪ মণের বেশি ধান পাওয়া যায় না। তাই উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৮৮, ৮৪ হাইব্রিড জাতের ধান এ মৌসুমে তিনি আবাদ করছেন। এ ধান বিঘাপ্রতি ২২ থেকে ২৩ মণ পাওয়া যায় বলে জানান। আগে ধানচাষে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হতো। হাইব্রিড ধান আবাদে ফলন ভালো হওয়ায় এ চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন।  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলায় বেশিরভাগ জমিতে বোরো ধান আবাদ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। শীতের কারণে বোরো ধান আবাদ পিছিয়ে নেয় কৃষকরা। দিন দিন উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে এবং সেচব্যবস্থা ভালো থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর