সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

খালের বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

খালের বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি

গাজীপুরের শ্রীপুরে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষেই লবলং খালে ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানার কেমিক্যাল বর্জ্য। ক্রমেই বিশাল ময়লার স্তূপে পরিণত ও কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি, পলিথিনে সয়লাবে লবলং খালের দুই পাশে শত শত একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। জমিতে চাষাবাদ করতে না পেরে বছরের পর বছর কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ময়লার স্তূপ থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধে নাজেহাল হতে হয় মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও স্থানীয়দের। শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি ও কেওয়া বাইদ থেকে উৎপত্তি হয়ে বৈরাগীরচালা, কেওয়া, গিলারচালা, মাধখলা ও বেতঝুড়ি গ্রাম ঘেঁষে লবলং নামক খালটি দোখলায় গিয়ে লবণদহ খালে গিয়ে মিশেছে। আর এ খাল কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে শতাধিক শিল্পকারখানা। কারখানার উৎপাদিত কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য খালের পানির সঙ্গে মিশে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী বিলীনের পথে। ১০/১২ কিলোমিটার খালের আশপাশের হাজার হাজার গাছপালা মরে গেছে। পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি স্পিনিং কারখানাসহ প্রায় শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কেমিক্যাল মিশানো ও ময়লা পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর খাল কেন্দ্রিক গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় পৌর শহরের সব ময়লা-আবর্জনা এনে ফেলায় আবর্জনার পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জ্যে খালের দুই পাশে কৃষকের ফসলি জমিতে পড়ছে। খালের বিষাক্ত পানি উপচে কৃষকের খেতে যাওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় জমির মালিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হেকিম পালোয়ান জানান, পৌর শহরের সব ময়লা-আবর্জনা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় খালের এই অংশে ফেলার ফলে এখানে দীর্ঘ হচ্ছে ময়লার স্তূপ। ময়লা-আবর্জনা জমিতে মিশে আশপাশের শত শত বিঘা জমি কয়েক যুগ থেকে অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের পাশে দিনের পর দিন বর্জ্য ফেলে কৃষকের ফসলি জমি নষ্ট করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ভুক্তভোগী কৃষক আবুল হোসেন প্রধান বলেন, বিঘার পর বিঘা জমি থাকলেও কয়েক যুগ ধরে অনাবাদি অবস্থায় রয়েছে। বছরজুড়েই খালের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে তলিয়ে থাকে জমি। এই কারণে কোনো ধরনের চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। খালি পায়ে হেঁটেও জমির কাছে যাওয়া যায় না। শ্রীপুর নদী পরিব্রাজক দলের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, একটা সময় খাল ছিল কৃষকের জমির প্রাণ। ফসল উৎপাদন, গোসল করাসহ সব কাজেই খালের পানি ব্যবহার করা হতো।

কিন্তু শিল্পকারখানার আগ্রাসনে আজ সেগুলো অতীত। শুধু খালের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী অংশেই নয় খাল কেন্দ্রিক পুরো ফসলি জমির অবস্থায় শোচনীয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে খাল ও ফসলি জমি রক্ষায় বিভিন্ন সময় কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি কর্তৃপক্ষ।  শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমান বলেন, পৌরসভার বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলা হতো। ইতোমধ্যে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করা হয়েছে। খুব দ্রুতই নির্দিষ্ট ওই জায়গাতে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।

গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষণের অভিযোগে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে শ্রীপুর পৌরসভাকে চিঠি দেওয়া হলেও তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা গ্রহণ করছেন না। এদিকে খাল কেন্দ্রিক যেসব কারখানা গড়ে উঠেছে তাদের সবারই ইটিপি প্ল্যান্ট আছে এবং ব্যবহার করে থাকে। তবে কিছু অসাধু কারখানা দিনের বেলা পরিবেশ অধিদফতরের ভয়ে ইটিপি প্ল্যান্ট চালু রাখলেও রাতে তা বন্ধ রাখে। এসব দিক বিবেচনা করে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করায় বিভিন্ন অংকের আর্থিক জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের দায়ে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর