সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

লিচু বাগানে মৌ চাষ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

লিচু বাগানে মৌ চাষ

লোভনীয় দেশসেরা ফল দিনাজপুরের লিচুর বাগানে মুকুলে ছেয়ে গেছে। লিচু বাগানগুলোয় এখন মুকুলের ম ম গন্ধ। ম ম গন্ধে মৌমাছিরা এগাছ থেকে ওগাছে উড়ে সংগ্রহ করছে মধু। সুস্বাদু, মিষ্টি এ মধু মৌমাছির মাধ্যমে আহরণ করছেন মৌ-চাষিরা। এতে বাগানীরা ও মৌচাষি উভয় লাভবান হচ্ছেন। এবার দিনাজপুর অঞ্চলের লিচুর মুকুল থেকে প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার মধু উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানান উত্তরবঙ্গ মৌ-চাষি সমিতির সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ। লিচু বাগানে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ-চাষিরা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দিনাজপুরে মধু সংগ্রহে প্রায় ৩৫০জন মৌ-চাষি ব্যস্ত সময় পার করছেন। মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করায় লাভবান মৌচাষিরা, অন্যদিকে মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলের পরাগায়ন ঘটায় লিচুর বাম্পার ফলনের আশা বাগানীদের। এতে বেকারত্ব যেমন দূর হচ্ছে তেমনি লিচুর ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাশিমপুর এলাকার লিচুবাগানে ১০০ মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছেন মোসাদ্দেক হোসেন। প্রতি সপ্তাহে বাক্স থেকে মধু আহরণ করতে হয়। এ মৌসুমে তিনি প্রায় দেড়টন মধু পাবেন বলে জানান। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে মৌ-খামার গড়ে মধু উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন তিনি। অল্প সময়ে মৌ-চাষেই হয়েছেন স্বাবলম্বী তিনি।  সফল মোসাদ্দেক হোসেন জানান, কাঠের বাক্সে তিন ধরনের মৌমাছি থাকে মৌচাকে। রাণী, পুরুষ আর শ্রমিক মাছি। ২-৩ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে রাণী। পুরুষ মৌমাছিরা বাঁচে দেড় মাস। শ্রমিকরা বাঁচে এক মাস। পুরুষ মৌমাছির হুল নেই এবং সবচেয়ে অলস। এরা শুধু প্রজননে অংশ নেয়। মৌচাকের সবচেয়ে কার্যক্ষম হলো শ্রমিক মাছি। চাক তৈরি, মৌচাকের পরিষ্কার, মৌ শিশুর লালন, রাণী তৈরি, রাণীর জন্য বিশেষায়িত রয়াল নামক জেলি উৎপাদন, খাবার সংগ্রহ, নিরাপত্তার মতো কাজগুলো শ্রমিক মৌমাছিরাই করে থাকে। কাঠের বাক্সে ৮ থেকে ১০টি মৌচাক থাকে। প্রতি চাকে রাণীর সংখ্যা মাত্র একটি। নতুন রানীর সৃষ্টি হলে চাক পৃথক হয়ে যায়। ষড়ভূজাকার মৌ ঘরগুলো করা হয়। মধু উৎপাদিত হয় উপরে, নিচের দিকে বাচ্চা তৈরির জন্য রানী ডিম পাড়ে। তিনি জানান,  মৌসুমে একটি বাক্সসহ বিভিন্ন খরচ হয় মোট ৩ হাজার টাকা। এরপরেও কেউ আন্তরিকতা, ধৈর্য নিয়ে পুজি বিনিয়োগ করলে লাভ হবেই। লোকসান হবে না বলে জানান তিনি। লিচুর মুকুল ছাড়াও সরিষা, ধনিয়া, লিচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, সজিনা, কেওড়া, ধঞ্চা থেকেও উৎপাদিত হয় মধু। মোসাদ্দেক হোসেন আরও জানান, মধু চাষ লাভজনক। মধুচাষের মাধ্যমে দেশ থেকে বেকার সমস্যা দূর করা যেতে পারে। বিশ্ব বাজারে মধুর প্রচুর চাহিদা থাকায় রপ্তানি করা গেলে দেশ অর্জন করবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।

মধু চাষের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটি প্রত্যাশা মোসাদ্দেকসহ মধু চাষিদের।  উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, দিনাজপুর অঞ্চলে লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণে কাজ করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৩২০-৩৫০জন মৌচাষি। গতবার এখান থেকে ৬-৭শ মে.টন মধু উৎপাদন হলেও এবার এ মৌসুমে ১০০০-১২০০ মে.টন মধু উৎপাদন হবে বলে আশা করেন। প্রতি মে.টন মধু পাইকারি বিক্রি আড়াই লাখ টাকা। উল্লেখ্য, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান আছে ৫৪১৮টি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর