শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

হুমকির মুখে মুহুরী সেচ প্রকল্প

জমির বেগ, ফেনী

হুমকির মুখে মুহুরী সেচ প্রকল্প

ফেনী নদীতে ভারত ৩৬টি শক্তিশালী পাম্প বসিয়ে দৈনিক ৭২ কিউসেক পানি নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে মুহুরী সেচ প্রকল্প। জানা যায়, এতে দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চল পড়তে পারে পানির সমস্যায়। ১৯৮৪ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ১৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ফেনীর সোনাগাজীতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘মুহুরী সেচ প্রকল্প’ নির্মাণ করেন। এ সেচ প্রকল্পটির ফলে ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি জেলার ১০টি উপজেলার লাখ লাখ হেক্টর জমিতে লোনামুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ফেনী, মুহুরী ও কালিদাস পাহালিয়া নদী। উক্ত তিনটি নদীর পানি দিয়ে এ অঞ্চলের ১৪ হাজার হেক্টর সেচ কাজ করার কথা। বাস্তবতা হলো এখন শুকনো মৌসুমে এ প্রকল্পের আওতায় থাকা ১০ হাজার হেক্টর জমিতেও সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মুহুরী সেচ প্রকল্পের ৮০ ভাগ পানির মূল উৎস এ ফেনী নদী। ফেনী শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম থেকে ৭০ কিলোমিটার ও সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ফেনীর সোনাগাজীতে মুহুরী সেচ প্রকল্পটি অবস্থিত। ফেনী নদীর এক পাশে বাংলাদেশের অলিনগর অন্য পাশে ভারতের আমলিঘাট। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার করেরহাটের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে বয়ে গেছে ফেনী নদী। যার অন্য পাশে ভারত। শুষ্ক মৌসুমে নদী তীরবর্তী চট্টগ্রামের মিরসরাই, খাগড়াছড়ির রামগড়, ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী ও সোনাগাজী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের দক্ষিণাংশ এবং নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু অংশে সেচের পানির একমাত্র উৎস এ নদী। গত কয়েক বছর ধরেই নদীর বাংলাদেশের অংশে পানির পরিমাণ কম থাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিন দিন তার তীব্রতাও বাড়ছে। জানা যায়, ভারত তাদের উত্তর-পূর্ব অংশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের খাবার পানির অভাব মেটাতে বেশ কয়েক বছর ধরে ফেনী নদী থেকে বিভিন্ন কায়দায় পানি তুলে নিচ্ছে। তারা ফেনী নদীকে আন্তর্জাতিক নদী প্রমাণের জন্য করছে বার বার বৃথা চেষ্টা। ভারত তাদের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুমের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বিভিন্ন সময় শক্তিশালী পাম্প মেশিন বসিয়ে ফেনী নদী থেকে একতরফাভাবে পানি তুলে নিচ্ছে। তারা ৩৬টি পাম্প মেশিন দিয়ে দৈনিক ৭২ কিউসেক পানি নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। ২০১০ সালে যৌথ নদী কমিশনের ৩৪তম বৈঠকে সাবরুম শহরের মানুষের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১২ সালে কারিগরি কমিটির বৈঠকে সাতটি শর্তসাপেক্ষে খাবার পানি সরবরাহের জন্য ‘লো লিফট’ পাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকায় সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পুনরায় অঙ্গীকার হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ৫ অক্টোবর ভারতে শীর্ষ বৈঠকে ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নেওয়ার বিষয় যৌথ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সমঝোতা অনুযায়ী দুই দেশের প্রকৌশলীরা যৌথভাবে নদীতে কূপ স্থাপনের স্থান চূড়ান্ত করার কথা ছিল।

 

সর্বশেষ খবর