বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

পটুয়াখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

পটুয়াখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ

হঠাৎ করেই উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। রোগী বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে হাসপাতালে শয্যা সংকট। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বললেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। নিয়ম মেনে চললেই রক্ষা পাওয়া যাবে ডায়রিয়ার হাত থেকে। হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এ বছর চলতি মৌসুমে গরম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর প্রায় প্রতিটি উপজেলায়ই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দিন দিন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হচ্ছে রোগী। বাড়তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীরা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি রোগী যাদের অবস্থা গুরুত্বর তাদেরকে পাঠানো হচ্ছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফলে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় মেঝেতে থাকতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। এমনকি হাসপাতালের বারান্দা বা করিডরেও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন রোগীরা। এতে করে হাসপাতালের অন্যান্যদের মাঝেও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া এলাকা থেকে আসা রোগী রনির মা জানান, কী কারণে যে আমার বাচ্চার এ রকম হলো তা বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করেই রাতে দেখি বাচ্চা পাতলা পায়খানা করছে। একটু সময়ের মধ্যেই কয়েকবার পায়খানা সঙ্গে বমি। সকালেই বাচ্চাকে ভর্তি করি। স্যালাইন ও মুখে খাওয়ার ওষুধ চলছে। আগের চেয়ে একটু সুস্থ। আমাদের এলাকায় আরও শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা জানান, হঠাৎ করেই আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। তবে হাসপাতালে খাবার ওষুধ ও স্যালাইন পাওয়া যায়। বেডের সমস্যায় অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাই কষ্ট হয় তাদের। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানায়, ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬০৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫০৯ জন। আর গত ৭ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৭৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন। এর মধ্যে গলাচিপা ও কলাপাড়ায় ডায়রিয়া আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আইভি স্যালাইন এক হাজার সিসি ১৪ হাজার ১০০ পিস ও পাচ শ সিসি ৬ হাজার ৩৮০ পিস মজুদ রয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত সাহা বলেন, তীব্র গরম আর বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করাই ডায়রিয়ার প্রধান কারণ। গরমে বিশুদ্ধ পানি পান করা, খাবার আগে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়া ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতে চলার কথা বলেন তিনি। যে সব শিশুদের বয়স দুই বছরের নিচে তাদের অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

এ ছাড়া রোগীর অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, পটুয়াখালীতে এমনিতেই পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। আর গরম বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিতে লবণাক্ততা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তাই দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই রোগীর সু-চিকিৎসা দিতে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রচণ্ড গরমে সাধারণত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ে। আমরা সবাইকে সচেতন করছি। ডায়রিয়া মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ওষুধ এবং স্যালাইন মজুদ আছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

সর্বশেষ খবর