বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

দখলে বরগুনার ভাড়ানি খালের মরণদশা

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

দখলে বরগুনার ভাড়ানি খালের মরণদশা

এক সময়ের ব্যস্ততম খাল। যে খালে খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে একমাত্র নৌপথের যোগাযোগ ছিল। এ খালটি মিশেছে বিষখালী ও বলেশ্বর নদীতে। ব্যবসায়ীদের একমাত্র রুট ছিল চরদুয়ানী লঞ্চঘাট। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে গেছে, হারিয়ে ফেলেছে চরদুয়ানীর ভাড়ানি খালের যৌবন। চরদুয়ানীর ভাড়ানি খালটি দখলের মহোৎসব চলছে। যার জমির সামনে খালের অংশ পড়েছে সে-ই তার ইচ্ছামতো ভরাট করে ইমারত নির্মাণ করছে। আস্তে আস্তে ভাড়ানি খালের যৌবন হারাতে বসেছে। এ খালের যৌবন ফেরাতে যেন ভাড়ানি খাল নিজেই কান্না করছে। বলেশ্বর নদের পূর্বে চরদুয়ানী বাজার আর পশ্চিমে সুন্দরবন হওয়ায় এ বাজারটি সব সময়ই সরগরম থাকে। আর এত মানুষের ভিড়েও  আইনের  কোনো তোয়াক্কা না করেই এভাবেই খালদস্যুরা জবরদখলে নিচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা সরাতে প্রশাসন এবং আদালতের একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মানছে না কেউ। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যার জমির সামনে খালের অংশ পড়েছে সে-ই তার ইচ্ছামতো দোকানঘর নির্মাণ করছে। চরদুয়ানী ও কাঁঠালতলীর দুই ইউনিয়নের সংযোগ এ খালের দুই পাশেই ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে খালটি একেবারেই দখলে নিয়ে গেছে। স্থানীয় একডজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ রয়েছে। দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২৫ মে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে উচ্ছেদ সংক্রান্ত কেস নথি অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে তৎকালীন পাথরঘাটা ইউএনও সাখাওয়াত হোসেন সরকার। পরের বছর ১৯ ফেরুয়ারি ১৯টি উচ্ছেদ মামলা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বরগুনা জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজি হাফিজুল আমিনকে নিয়োগ দেন। এর মধ্যেই চলে গেল বেশ কয়েক বছর। সবশেষ গত কয়েকদিন আগে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ সরেজমিন গিয়ে খাল দখল বন্ধ করেন, পরে নতুন করে কোনো শুরু না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়ে এলেও কোনো কাজের কাজ হয়নি। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্য দিবালোকে এ মহোৎসব চলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মাওলানা ইদ্রিস আলী বলেন, কয়েকদিন আগে ইউএনও সরেজমিন এসে কাজ বন্ধ করে দেন। কয়েকদিন যাওয়ার পরই ফাঁকে ফাঁকে কাজ করছে তারা। কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন বলেন, নাব্য হারিয়ে গেলে প্রকৃতির ওপর বিরূপ চাপ পড়ে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়। যার কারণে পরিবেশের ভারসাম্যতাও হারিয়ে যেতে বাধ্য। এ জন্য পরিবেশ রক্ষার্থে সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএন) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ বলেন, কয়েকদিন আগে সব কাজ বন্ধে করে স্থাপনাগুলো ভাঙার নির্দেশনা দিয়েছি। এখন কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আবার কাজ শুরু করে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, যেসব খাল অবৈধ দখলে রয়েছে সেসব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান আমাদের অব্যাহত রয়েছে। চরদুয়ানীতে এ রকমের যদি অবৈধভাবে দখল হয়ে থাকে তাহলে তাও উচ্ছেদ করা হবে।

সর্বশেষ খবর