বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

তুরাগ নদের অস্তিত্ব বিলীনের পথে

আফজাল, টঙ্গী

তুরাগ নদের অস্তিত্ব বিলীনের পথে

দিন দিন অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর উপকণ্ঠের তুরাগ নদের। দখল, দূষণ আর নাব্যতাই এর মূল কারণ। ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদফতর থেকে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায়  ভয়াবহতা বেড়ইে চলছে। নদের দিকে তাকালে মনে হয় এ যেন ময়লার ড্রেন । নদের পাশ দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে নাক চেপে। এসব ময়লা আবর্জনা পচা পানির দুর্গন্ধে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই। তাই প্রথমত নদের পানি পরিস্কারের ব্যবস্থা এবং নৌ-যান চলাচলের ব্যবস্থা করতে  হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। নদের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করলেও আসলে কতটাই বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন এখন জনমনে। গাজীপুর জেলার  কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর এলাকায় আসিয়া দুইভাবে ভাগ হয়ে এক ভাগ দক্ষিণে বংশী নদী হিসেবে সাভার  ধলেশ্বরী নদীর সহিত মিলিত হয়েছে। অন্যটি তুরাগ নাম ধারণ করিয়া বরইবাড়ি, বোয়ালী, চা-বাগান, মির্জাপুর, কাউলতিয়া, মধ্যপাড়া,  কোনাবাড়ি, বামন, কাশিমপুর, গাছা, ইয়ারপুর, আশুলিয়া উত্তরা (তুরাগ থানা) বিরুলিয়া, মিরপুর হয়ে কামরাঙ্গীর চর এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রবহমান। তুরাগের প্রবাহকালে ইছরকান্দি এলাকায় আসিয়া উহা দুইভাগে ভাগ হয়ে প্রবাহিত হতে থাকে, যাহার পূর্বদিকে প্রবাহিত শাখা সাবেক টঙ্গী পৌরসভার ভাদাম,ভাকরাল। এই ভাদাম ও ভাকরালকে আবার দুইভাগে ভাগ করে মুদাফা বড়দেওড়াকে উত্তরে রেখে বিশ্বইজতেমার পশ্চিমে কহর দরিয়া নামকরণ করিয়া বালু নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এক সময় এই তুরাগ নদ দিয়ে নৌ-যান চলাচল করতো এবং এই নদে গোসল কিংবা পানি দিয়ে রান্নাবান্না করতো এবং নদীতে মানুষ মাছধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে গোসল কিংবা পানি ব্যবহার তো দূরের কথা ময়লা আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে নদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব না। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার মানুষ নৌযান ট্রলারে করে ঐতিহ্যবাহী টঙ্গী বাজার আসতো কেনাকাটা করতে। বর্তমান সরকার নৌপথে আসা বিভিন্ন মামামাল কিংবা চলাচলের  সুবিধার্থে টঙ্গীর পাগাড় এলাকায় ২০১২ সালের জুনে প্রায় পাঁচ কোটি ব্যয়ে নির্মিত হয় নদী বন্দর। দখল দূষণ আর নাব্যতার কারণে তুরাগ নদ সরু হওয়ার ফলে নদী বন্দরটি অকেজো হয়ে পরে আছে বছরের পর বছর ধরে। টঙ্গী পাগাড় এলাকায় জাবের এ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লি: এর প্রশাসিনক কর্মকর্তা মো: কায়েস বলেন, নোমান গ্রুপের জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স কারখানাটি পরিবেশবান্ধব।  ছোড়া এই কারখানার ইটপির পানি এতো পরিষ্কার এবং দূষণমুক্ত, যা ব্যবহারের উপযোগী। যা অন্য কোনো কারখানার পানির সঙ্গে মিলবে না। এভাবে প্রতিটি ওয়াশিং ও ডাইং কারখানায় শতভাগ ইটিপি ব্যবহার করলে হয়তো নদের পরিবেশ এমন হতো না। এ ছাড়া টঙ্গী বাজারের বর্জ্য ও বাসাবাড়ির বর্জ্য নদে ফেলার কারণে এমনটা হচ্ছে। টঙ্গী সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ ওয়াদুদুর রহমান বলেন, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে ট্রলারে করে টঙ্গী বাজার আসতাম বাজার করতে, সেই নদের পানি এখন আর নেই। পানিতে ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধের কারণে এখন অনেকইে টঙ্গী বাজার আসে না বাজার করতে।  এ ব্যাপারে টঙ্গী নদীবন্দর এর উপ-পরিচালক মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নদের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনার লড়াই চলছে। নদের পাশে দিয়ে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ড্রেনের ময়লা আবর্জনা নদে প্রবাহিত হতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং খনন কাজ চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর