সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

স্লুইসগেট-সেতু নির্মাণের সুফল পাচ্ছেন দুই উপজেলাবাসী

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

স্লুইসগেট-সেতু নির্মাণের সুফল পাচ্ছেন দুই উপজেলাবাসী

দিনাজপুরের দুটি উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত পুনর্ভবা নদী থেকে কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা ও স্থানীয় মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় নির্মিত স্লুইসগেট বা জলকপাট নির্মাণ শেষ হয়েছে। তবে উদ্বোধনের আগেই জেলার দিনাজপুর সদর ও বিরলের প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর অনাবাদি জমি শুষ্ক মৌসুমে চাষের আওতায় এসেছে এবং স্লুইসগেটের ওপর দিয়ে সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। ইতোমধ্যেই এর সুফল পেতে শুরু করেছে দুই উপজেলার মানুষ। কৃষিনির্ভর দুই উপজেলায় খরা মৌসুমে সম্পূরক সেচের লক্ষ্যে এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিকল্পে পুনর্ভবা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে গৌরীপুর-রানীপুর এলাকায় স্লুইসগেটসহ সেতুটি ৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। প্রকল্পটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৬ সালে। নির্মাণকাজ শেষ হয়ে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী মে মাসে এটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া নির্মিত এ দৃষ্টিনন্দন গৌরীপুর ব্রিজ ও স্লুইসগেট এলাকায় প্রতিদিন মানুষের আনাগোনায় পরিণত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। জলকপাট বা স্লুইসগেট নির্মাণ ছাড়াও সেতু নির্মাণে এ অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে চার ব্যান্ড বিশিষ্ট রেগুলেটর ৬ মিটার চওড়া, ৬ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়। রয়েছে ৯২ মিটার উইয়্যার। নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২১ মিটার, প্রস্থ ৫.৩ মিটার এবং উভয় পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়েছে ৫০০ মিটার। করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। জানা যায়, পুনর্ভবার ভাটিতে পশ্চিম পাড়ে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের রানীপুর, কামদেবপুর, প্রাণপুর, বনগাঁও, শাহাপুর, ধর্মজৈন, গোয়ালিয়াপাড়া। আর পুবে সদর উপজেলার গৌরীপুর, ঘুঘুডাঙ্গা, আস্করপুর গ্রাম। নদীসংলগ্ন এসব গ্রামের মানুষ উপকৃত হচ্ছে বেশি। দিনাজপুর সদরের গৌরীপুর গ্রামের কৃষক আরমান হোসেন জানান, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যেত। দুইপাড়ের শত শত একর জমি অনাবাদি থাকত। ১৫-২০ ফুট গর্ত করে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে খেতে পানি দিতে হতো। স্লুইসগেট নির্মাণ হওয়ায় এখন নদীতে পানি থাকছে। আশা করি ফসল ফলাতে আর পানির কষ্ট হবে না নদীর পাড়ের কৃষকদের। বনগাঁও গ্রামের মোসাদ্দেক হোসেন জানান, মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তা কিন্তু ১৫-১৬ কিলোমিটার ঘুরে দিনাজপুর শহরে যেতে হতো। বর্ষাকালে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে হতো নৌকার জন্য। আজ স্লুইসগেটের সঙ্গে সেতু নির্মাণ হওয়ায় দীর্ঘদিনের এসব ভোগান্তি দূর হয়েছে।

স্থানীয় আসাদুজ্জামান লিটনসহ কয়েকজন জানান, শহরের কোলাহলমুক্ত, নিরিবিলি আর জীবনের এক ঘেয়েমি কাটাতে ভিড় করছে পুনর্ভবা নদীতে নির্মিত এ গৌরীপুর ব্রিজ ও স্লুইচগেট এলাকায়। প্রতিদিন বিকালে মানুষের আনাগোনায় পরিণত হয় বিকল্প বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। প্রায় প্রতিদিনই দিনাজপুর সদরের আস্করপুর ইউপির গৌরীপুর ব্রিজ ও স্লুইচগেট এলাকায় উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ক্লান্তিময় এবং একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে আনন্দের সন্ধানে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করেন সবাই। তবে ছুটির দিনে ভিড় হয় এখানে। এদিকে দর্শনার্থীদের ভিড়ের কারণে ভাসমান অনেক খাবারের দোকানও বসে। নদীতে চলে নৌকা দিয়ে ভ্রমণ। পাড়ের দর্শনীয় ছাতার নিচে বসে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার খেতে ভোলেন না কেউ।  দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর জামান নয়ন জানান, পুনর্ভবায় গৌরীপুর স্লুইসগেট ও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ। আগামী মাসেই এর উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এটি নির্মাণের ফলে দুই উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর অনাবাদি জমি শুষ্ক মৌসুমে চাষের আওতায় আসছে। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে।

সর্বশেষ খবর