শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

দুই বছরেও জোড়া লাগেনি সেতুর দুই প্রান্ত

শুভ্র মেহেদী, জামালপুর

দুই বছরেও জোড়া লাগেনি সেতুর দুই প্রান্ত

সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নে বন্যার পানির তোড়ে মাঝখান থেকে গার্ডার ও পিলার ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঝিনাই নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর দুই প্রান্ত। তারপর দুই বছর কেটে গেলেও জোড়া লাগেনি সেতুর ভাঙা অংশ। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল দুই উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কাঠের সেতুই চলাচলের একমাত্র ভরসা স্থানীয় মানুষের। সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের চররৌহা, চরনান্দিনা, বড়বাড়িয়া, বীরবড়বাড়িয়া, হেলেঞ্চাবাড়ী, স্বাধীনাবাড়ী, চরহাটবাড়ী, সিধুলী, চুনিয়াপটল, সিংগুরিয়া, ডিগ্রীপাজবাড়ী, খন্দকারবাড়ী, চরছাতারিয়া, আদ্রা, শুয়াকৈর এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার চরলোটাবর, শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ী, সদরাবাড়ী, রায়েরছড়া গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সরিষাবাড়ী উপজেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল মাঝপথ দিয়ে বয়ে চলা ঝিনাই নদী। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত, হাটবাজার পরিচালনা, উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিসহ নানা ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছিল স্থানীয়রা। দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে শুয়াকৈর-হুদুরমোড় শাহাজাদাহাট এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর ২০০ মিটার ঝারকাটা ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০০৬ সালে ব্রিজটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হয় এ অঞ্চলের মানুষের। কিন্তু ২০২০ সালের ২১ জুলাই বন্যার পানির প্রবল তোড়ে সেতুটির দুটি পিলারসহ ২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি গার্ডার এক ফুট দেবে যায় এবং ওইদিন রাতেই ব্রিজের মাঝের অংশে ৭ নম্বর পিলার এবং ৬ ও ৭ নম্বর স্প্যানের ৪০ মিটার ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও জোড়া লাগেনি ব্রিজের দুই প্রান্ত। ফলে পূর্বের দুর্ভোগ আবারও ফিরে আসে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাঁকো তৈরি করে কোনো রকমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে এ পথে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। এতে মাঝে মধ্যেই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বর্ষা কিংবা বন্যার সময় নৌকা চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে না চাওয়ায় ক্রমেই কমে আসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ ছাড়াও সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে পণ্য আনানেওয়ায় বাড়তি খরচের পাশাপাশি চরের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা। রোগী পরিবহনে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। স্থানীয়দের অভিযোগ ব্রিজটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং অসাধু ব্যক্তিরা নদী থেকে বালি উত্তোলনের ফলেই ব্রিজটি ভেঙে যায়। এরপর জনপ্রতিনিধিসহ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ব্রিজ নির্মাণে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়েদুজ্জামান সাদেক জানান, বন্যায় ভেঙে যাওয়া সেতুটির তথ্য ইতিমধ্যেই প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু আশ্বাস নয়, শিগগিরই সেতুটি নির্মাণ করে যাতায়াতের পথ সুগম করবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।

সর্বশেষ খবর