শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

৩ হাজার ৫০০ গৃহহীন পাচ্ছেন পাকা বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

মাথা গোঁজার জায়গা নেই। অন্যের জায়গায় ঝুপড়ি তৈরি করে কোনোমতে থাকছেন, আবার কেউ অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকেই জীবন-যাপন করছেন। এমন অসহায় গৃহহীন মানুষ নিজের একটি ঘর পাবেন। তা কখনই ভাবতে পারেননি। দিনমজুর মানুষের নিজের বলে কিছুই ছিল না, এখন তাদের ঘর হয়েছে। সঙ্গে নিজের নামে জমির দলিল। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে বগুড়ার হাজারো মানুষের। জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেকেই ঘর পেয়েছেন। জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ৪ হাজার ২৪ জনের মধ্যে ঘর পাচ্ছেন ৩ হাজার ৫৪৩ জন। পরবর্তীতে আরও ৪৮১টি ঘর নির্মাণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী ৪ হাজার ২৪ জন ‘ক’-শ্রেণির ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ঠিক করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ হাজার ৩০৯টি ঘর বিতরণ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ২৩৪টি ঘর নির্মাণ শেষে এখন হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। খুব দ্রুত সময়ে এই ঘরগুলো ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

খাস জায়গায় সরকারি অর্থে বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষে গৃহহীন পরিবারের হাতে চাবি হস্তান্তর করা হবে। নতুন বাড়ি পাওয়ার সংবাদে পরিবারে বইছে আনন্দ। ঘরগুলো নির্মাণের পর পতিত এলাকাটি এখন মানুষের বসবাসের জন্য চকচকে করছে। ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায় নিয়ে জেলায় মোট ঘর বিতরণ ও নির্মাণকাজ হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৩টি। আর বাকি ৪৮১টি ঘর ভূমিহীনদের তালিকা প্রস্তুত করে ঘর নির্মাণ শেষে বিতরণ করা হবে। জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে ১ম ও ২য় পর্যায়ে উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ হয়েছে আদমদিঘি উপজেলায় ১২৫টি ঘর, সদরে ৪৭৩টি, ধুনটে ২২১টি, দুপচাঁচিয়া ২৮৩টি, গাবতলীতে ৭০টি, কাহালুতে ১০৭টি, নন্দীগ্রামে ২৩৬টি, সারিয়াকান্দিতে ১৫৮টি, শাজাহানপুরে ২৮টি, শেরপুরে ১৮০টি, শিবগঞ্জে ২৫৩টি, সোনাতলায় ১৭৫টি। এসব উপজেলায় ৩য় পর্যায়ে আরও ১ হাজার ২৩৪টি ঘর হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাহালু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল জব্বার জানান, অত্র উপজেলায় প্রথম ধাপে ৭৭টি ও দ্বিতীয় ধাপে ৩০টি পাকা বাড়ি দেওয়া হয় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে। তৃতীয় ধাপের প্রথম পর্যায়ে ৪৬টি বাড়ির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই ৪৬টি বাড়ির মধ্যে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশেই ভাগদুবরায় সরকারি সম্পত্তির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ২৭টি বাড়ি। এ ছাড়াও সরকারি খাস জায়গার ওপর কল্যাণপুরে ৬টি, কড়ই গকুলে ৭টি ও জীবনপুকুরে আরও ৬ বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এই ৪৬টি বাড়ির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুধু রঙের কাজ ও ফিনিশিং বাকি রয়েছে। সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক প্রথম পর্যায় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। সরকারি জায়গা উদ্ধার থেকে শুরু করে গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণকাজ চলাকালীন ও নির্মাণ শেষে বাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১ম ও ২য় পর্যায়ে নির্মিত ঘরগুলো ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১ম ও ২য় পর্যায়ের ঘরগুলো উদ্বোধন করেছেন। ৩য় পর্যায়ে ঘরগুলোও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই ৩য় পর্যায়ের ঘরগুলোও গৃহহীনদের মাঝে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া থেকে শুরু করে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। কাজের অগ্রগতিতে কোনো কমতি রাখা হয়নি। ভূমিহীনরা যেন ঠিকঠাকমতো থাকতে পারেন। সে দিকে নজর রেখে কাজগুলো মজবুতভাবে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পেয়ে ভূমিহীনরা যেন খুশি হয় সে বিষয়ে প্রশাসনের সব কর্মকর্তাও কাজ করছেন। অবশিষ্ট ভূমিহীনদের তালিকা করে তাদের ঘরও তৈরি করে দেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর