সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

চরমপন্থি অধ্যুষিত ভবানীপুরে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র হয়নি

৩২ বছরেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর বাজার তিন জেলার মিলনস্থল হওয়ার সুবাধে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির অভয়ারণ্য বলে পরিচিতি পেয়েছে। উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের এই এলাকাটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অপরাধীরা অপরাধ ঘটিয়ে সটকে পড়তে পারছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশ স্বাধীনতার পর থেকেই ভবানীপুরে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করার দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। কিন্তু তাদের এই দাবি দীর্ঘ ৩২ বছরেও পূরণ হয়নি। জানা যায়, সীমান্তবর্তী জেলার শেরপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ এবং নাটোরের সিংড়া উপজেলার মিলনস্থল শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর-রানীরহাট বাজার। সর্বহারা অধ্যুষিত বাজারটিতে মাঝে-মধ্যেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকান্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের সদস্যদের ব্যাপক কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবানীপুর বাজারের একাধিক ব্যক্তি জানান, হঠাৎ করেই গভীর রাতে মুখোশ পরিহিত ৪০-৫০ জনের মতো সশস্ত্র যুবক-যুবতী ভবানীপুর বাজারে এসে অবস্থান নেয়। তারা বাজার এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বিল্ডিংয়ের পিলারে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির পক্ষে হাতে লেখা রংবেরঙের পোস্টার সাঁটিয়ে দেয়। বিশেষ করে বোরো ও আমন ধান ঘরে তোলার আগমুহূর্তে তাদের আনাগোনা শুরু হয়। সেই সঙ্গে এলাকার প্রভাবশালী কৃষক ও জোতদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। পুলিশের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সর্বহারা পার্টির সক্রিয় সদস্যরা ভবানীপুর-রানীরহাট বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বেশকিছু হত্যাকান্ড ও লুটপাট সংঘটিত করেছে। এমনকি রাতে টহলরত পুলিশের ওপর গুলি চালান সর্বহারা পার্টির সদস্যরা। তাদের গুলিতে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে ডান পা হারান। সর্বহারাদের গুলিতে পা হারানো এএসআই নান্নু মিয়া বর্তমানে রাজশাহীতে কর্মরত। ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ৯ এপ্রিল পাবনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ১৪ জেলার ৫৯৫ জন চরমপন্থি আত্মসমর্পণের বিরোধিতা করে আগের দিন ৮ এপ্রিল রাতে চরমপন্থিরা ভবানীপুর বাজার এলাকায় সর্বহারা পার্টির সদস্যরা পোস্টারিং করছিলেন। এ সময় শেরপুর থানার একটি দল ওই বাজারটিতে রাতে টহল দিচ্ছিল। পুলিশের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে আমাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে সর্বহারার সদস্যরা। তাদের ছোড়া বুলেট এক পুলিশ সদস্যের ডান পায়ে বিদ্ধ হয়। ঘটনার সময় চরমপন্থিদের পাবনা ও রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে শুনেছি। তারা সংখ্যায় ছিল অন্তত ২০-২৫ জন। চরমপন্থিরা চলে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে তাদের ব্যবহার করা থ্রি নট থ্রি রাইফেলের একটি অবিস্ফোরিত গুলি উদ্ধার হয়। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ঘটনার পর ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট উপজেলার ভবানীপুর বাজারের পূর্বপাশে সেতুর ওপর পুলিশের সঙ্গে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত হয় গাইবান্ধা সদরের কাচদহ গ্রামের ডাকাত ধনেশ ওরফে সুকুমার সরকার ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামিহাল গ্রামের সর্বহারা আফজাল হোসেন। নিহতদের মধ্যে ধনেশ ওরফে সুকুমার সরকার পেশাদার ডাকাত এবং আফজাল হোসেন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিল। একই বছরে ১ মে রাতে  দুই দল সন্ত্রাসীর গোলাগুলিতে নিহত হয় ধুনট উপজেলার সর্বহারার নেতা শফিউর রহমান জ্যোতি।

সর্বশেষ খবর