শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে মহোষধি আকন্দ

নীলফামারী প্রতিনিধি

মহৌষধি গুণসমৃদ্ধ উদ্ভিদ আকন্দ। এর পাতা গ্রামাঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক সেবাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। পাশাপাশি পাতা, ফুল, মূল, রসালো আঠা কবিরাজি, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি, হোমিও চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হতো। মানুষের বহুবিধ রোগমুক্তি বা নিরাময়ে মন্ত্র শক্তির মতো কাজ করত আকন্দ। কালের পরিক্রমায় গ্রাম বাংলার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এ উদ্ভিদ। আকন্দ এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। আকন্দ গাছে দুই ধরনের ফুল ধরে- সাদা ও বেগুনি রঙের। ফল সবুজ। বীজ লোমযুক্ত। এর বর্ণ ধূসর কিংবা কালচে। আকন্দ সাধারণত ৭ থেকে ৮ ফুট লম্বা হয়। এর পাতা লম্বা হয় ৫-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি আকন্দ গাছে ফুল ফোটে। মে থেকে জুন মাসের শেষ দিকে ধরে ফল। ফল পাকে আগস্ট থেকে নভেম্বরে। মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন হাকিম জানান, এক সময় গ্রামের মানুষ এ গাছের পাতা ভাঙা-মচকা, হাড়-জোড়া লাগা, বাত ব্যথা, হাঁপানি শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ব্যবহার করতেন। নতুন প্রজন্ম এ গাছ না চেনায় এবং গুণাগুণ সম্পর্কে না জানায় মহামূল্যবান সনাতনী চিকিৎসা ব্যবস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।

ঝোপঝাড়, আগাছা মনে করে আকন্দ গাছের শিকড় উপড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রবীণ কেচুয়া মামুদ জানান, এক সময়ে ব্যথানাশক হিসেবে মহাশংকর তেল, কেরোসিন, সরিষা তেল সহনীয় গরম করে মালিশের পর আকন্দ পাতা আগুনে হালকা সেঁকা দিয়ে প্রলেপ দিত। তাতে দ্রুত ব্যথা উপশম হতো। এ চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল সাশ্রয়ী ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত। এখন বিলুপ্তপ্রায় আকন্দ গাছ। টুকিটাকি চিকিৎসায়ও খুঁজে পাওয়া যায় না। উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজিজার রহমান বলেন, আকন্দের বৈজ্ঞানিক নাম-ক্যালেট্রপিস, গোত্রের নাম প্রোসিরা এসক্লিপিয়েডিসি। পাতা রোমস ধরনের। পাতা ও ডাল থেকে দুধের মতো সাদা রঙের আঠা বের হয়। পাতা ব্যথানাশক হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। যুগের পর যুগ এই গাছ নানা রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করলেও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর