নড়াইলের কালিয়ায় বৈশাখ উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে প্রাচীন ঐতিহ্যলালিত কালিয়া পৌর শহরের বিশিষ্ট সেতারবাদক প্রয়াত রবি শঙ্করের পৈতৃক বাড়ির পূর্ব পাশে ঠাকুরবাড়িতে বৈশাখের ২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চড়ক পূজা উৎসব। এই পূজার মূল আকর্ষণ চড়ক ঘুল্লি দেখতে আসা হাজার হাজার মানুষের সমাগমে বসে গ্রামীণ মেলা। জানা গেছে, আলোচিত এ চড়ক মেলায় প্রায় ৪৫ ফুট লম্বা চড়ক গাছের ওপরে বাঁশ বেঁধে চার কোনা আকৃতির চড়কি বানানো হয়। চড়কির চার কোনায় চারটি দড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ঝোলানো প্রতিটি দড়ির সঙ্গে কাপড় বেঁধে বিশেষ কায়দায় চারজনের পিঠে বাঁধা হয়। তারপর শুরু হয় চড়কি ঘোরানোর কাজ। নিচ থেকে বাদ্য বাজনার সঙ্গে সঙ্গে ২৫-৩০ যুবক চড়কি দ্রুতবেগে ঘোরাতে থাকে। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থী সবাই আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। গতকাল দুপুর থেকে নারী-পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম ঘটে। বিকালবেলা ভক্তদের নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। মানুষরূপী কালী সেজে নৃত্য করে।

অন্য ভক্তরা নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাঁসি, করতাল বাজাতে থাকলে এ সময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীদের কণ্ঠে উলুধ্বনি দিতে থাকেন। প্রচলিত আছে, প্রায় ২০০ বছর আগে চড়ক মেলা শেষে ওই চড়ক গাছটিকে সেখানকার গঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে  দেওয়া হতো। তারপর চৈত্র মাসের ৩০ তারিখে ১০ জন লোক নদীর কাছে গিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজালে কিছু সময় পর চড়ক গাছটি নিজে নিজে পানির ওপরে ভেসে উঠত। তখন দড়ি দিয়ে গাছটিকে টেনে ওপরে আনা হতো। আবার মেলা শেষে চড়ক গাছকে ঠাকুরবাড়ির পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হতো। এই চড়ক পূজার মেলা বৈশাখের দ্বিতীয় দিন রূপ নেয় বৈশাখী মেলা হিসেবে। কালিয়া উপজেলা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, ‘কালিয়ার এই চড়ক পূজা ও মেলার বয়স প্রায় ২০০ বছর।