সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

চিংড়ির বাঁধাজালে সর্বনাশ, এক কেজি ধরতে মারা পড়ছে ৪০ কেজি পোনা

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

চিংড়ির বাঁধাজালে সর্বনাশ, এক কেজি ধরতে মারা পড়ছে ৪০ কেজি পোনা

বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের নদী-খালের মোহনায় জেলেদের পাতা চিংড়ির বাঁধাজালে বিভিন্ন প্রকারের মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। জেলেদের সূক্ষ্ম ফাঁসের ওই বাঁধাজালে এক কেজি চিংড়ি মাছ ধরতে বিভিন্ন প্রজাতির কমপক্ষে ৪০ কেজি মাছের পোনা মারা পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইলিশ, কোরাল, বোয়াল, দাতনে, আইড়, তাড়িয়াল, তপশে, পোয়া, টেংরা, কাইন ও কাঁকড়া, কচ্ছপ, হাঙরসহ শত শত প্রজাতির মাছের পোনা রয়েছে। জেলেরা শুধু চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করে অন্য সব মারা যাওয়া মাছের পোনা পানিতেই ফেলে দিচ্ছে। ফলে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় নদ নদীতে ক্রমন্বয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জেলেরা জানায়, সুন্দরবনের বলেশ্বর নদীর শুকপাড়া, ডিমের চরের বাহির পাশ থেকে বাদামতলা পর্যন্ত, কটকা ও দুধমুখী নদীর মোহনা, ছাপড়াখালী ও শেলা নদীর মোহনা, দুবলার চরের বিভিন্ন নদী খালের মোহনায় চিংড়ি ধরার জন্য সূক্ষ্ম ফাঁসের ওইসব অবৈধ বাঁধাজাল পাতা হয়। সুন্দরবন বিভাগের অফিসগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে প্রতিবছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত শত শত নিষিদ্ধ এ বাঁধাজালে  চলে ধ্বংসযজ্ঞ।

 ফলে অন্য জেলেরা সুন্দরবনসহ উপকূলের নদ-নদীতে আর তেমন মাছ পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, প্রতিগোনের (অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা) সময় সাত দিন করে নির্দিষ্ট হারে জেলেনৌকা প্রতি জ্ঞানপাড়া, কচিখালি, কটকা, কোকিলমনি, শেলা ও দুবলার বন অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অংকের উৎকোচ দিলেই জেলেদের নদী খালের মোহনায় বাঁধাজাল পাততে দেয় সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা।  এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, নিষিদ্ধ ওই বাঁধাজালে বঙ্গোপসাগরের সব ধরনের মাছের পোনা মারা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই সুন্দরবনসহ উপকূলীয় নদ-নদী ও খালে কোনো মাছ পাওয়া যাবে না। শরণখোলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আসা নদীর মোহনায় এ ধরনের সূক্ষ্ম ফাঁসের বাঁধাজাল পাতার কারণে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। এলাকাটি সুন্দরবন বিভাগের আওতাধীন। তাই উপকূলের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় নিষিদ্ধ ওইসব বাঁধাজাল পাতা বন্ধের জন্য মৎস্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বন বিভাগকে জাননো হবে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর উপকূলে নদ-নদী ও খালের মোহনায় বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের জাল পাতা হলে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর