সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

অপহরণের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৬

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী শিবু লাল দাস ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালককে অপহরণের পর ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় জড়িত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান পারভেজসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ ঘটনার মূল হোতা মো. মামুন ওরফে ল্যাড়া মামুনসহ তিনজন মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে ব্রিফিংয়ে। এ ছাড়া ল্যাংড়া মামুনসহ তিন পরিকল্পনাকারী ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক থাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটনের ডিবি টিম ও পটুয়াখালীর একাধিক টিম দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণের কাজে জড়িত সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়। পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ ঘটনার অভিযানে থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং করেন। অপরপ্রান্তে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাঈনুল হাসান সাংবাদিকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল, সদর থানার ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আসামিরা হলেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান পারভেজ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আক্তারুজ্জামান সুমন, তার ভাই ছাত্রলীগ কর্মী শামিম আহমেদ, মো. মিজানুর রহমান সাবু গাজী, মো. বিল্লাল ও সাব্বির হোসেন জুম্মান। এরা সবাই পটুয়াখালীর শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত ১১ এপ্রিল রাতে শহরের নিজ বাসায় যাওয়ার সময় গলাচিপা উপজেলার হরিদেবপুর-শাখারিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে শিবু লাল দাস ও তার ব্যক্তিগত প্র্যাডো গাড়িসহ চালক মিরাজ অপহরণ হন। রাত ১২টা ২ মিনিট ও ১টা ৫৯ মিনিটের সময় ভিকটিমের মোবাইল থেকে তার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায়, ভিকটিম তাদের নিকট আটক আছে। একই তারিখে দুপুর ২টার মধ্যে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিলে ভিকটিমকে তারা জীবিত অবস্থায় তাদের কাছে ফেরত দেবে নতুবা তার লাশ পাবেন। পরে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের সব টিম সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে শিবু লাল দাসের প্র্যাডো গাড়িটি ১২ এপ্রিল রাত দেড়টায় বরগুনা জেলার আমতলী থানার রহমানিয়া ফিলিং স্টেশন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গাড়িতে থাকা খেলনা পিস্তলের ভাঙা অংশ ও বস্তুগত সাক্ষ্য জব্দ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ ঘণ্টা পর রাত অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কাজীপাড়া এলাকায় এসপি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ল্যাড়া মামুনের ভাড়া গোডাউন থেকে জীবিত অবস্থায় শিবু লাল দাস ও তার ড্রাইভার মিরাজকে দুই হাত, দুই পা, মুখে, চোখে রশি, কাপড় ও স্কচটেপ দ্বারা বাঁধা প্লাস্টিকের বস্তাভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে বুদ্ধদেব দাস বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। শিবু লাল দাস উদ্ধারের পর চিকিৎসা শেষে পর দিন বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার তদন্ত কাজে ভিকটিমের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত, সিসিটিভির ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রচলিত নিয়মে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অত্র ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, নেতৃত্বদানকারীসহ অপহরণ কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থান হতে অভিযান পরিচালনা করে ১৬ এপ্রিল রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ছয়জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমদের অপহরণ কাজে ব্যবহৃত হাত, পা, চোখ বাঁধার জন্য স্কচটেপ, গামছা, রশি, দুটি প্লাস্টিকের বস্তা এবং সন্দিগ্ধ চুল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া অপহরণ কাজে ব্যবহৃত অটোরিকশা এবং অটোতে থাকা অপর বস্তাভর্তি মাতৃছায়া স্টিকারযুক্ত শপিংব্যাগ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, এ ঘটনার মূল হোতা মো. মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুনসহ তিন পরিকল্পনাকারী ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক থাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটনের ডিবি টিম ও পটুয়াখালীর একাধিক টিম দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণের কাজে জড়িত সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়েছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় ল্যাংড়া মামুনসহ তিনজন অপহরণ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। শিবু লাল ও তার চালককে অপহরণের পর হাত, পা, মুখ বেঁধে গাড়িতে উঠিয়ে এসডিও রোডে মামুনের কথিত গোপন আস্তানায় এনে শারীরিকভাবে অত্যাচার করে আটক রাখা হয়। পর দিন তাকে গুম করার উদ্দেশ্যে তার গোপন আস্তানা হতে এসপি কমপ্লেক্সের নিচতলায় পাকিং-এর মামুনের গুদামে রাখা হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন স্তরে ১০ হতে ১৫ জন অপহরণকারী জড়িত রয়েছে মর্মে জানান যায় এবং অপহরণকারীরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ। শিবু লাল দাস পটুয়াখালী শহরের পুরান বাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্কয়ার টয়লেট্রিজ ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পরিবেশক। ঠিকাদারি, ব্রিজের টোল আদায়ের ইজারা, খেয়াঘাট ইজারা, চালের আড়তসহবিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক ব্যবসা করে আসছেন।

সর্বশেষ খবর