রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এতে মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রের পাঁচ ইউনিটের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩টি। চালু আছে মাত্র ১টি। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭০ মেগাওয়াট। যা স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণ কম। একই অবস্থা কাপ্তাই হ্রদে নৌপথে চলাচলেও। ভাসমান ডুবোচরের কারণে দেখা দিয়েছে নানা বিড়ম্বনা। এরই মধ্যে নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে রাঙামাটির ৬টি উপজেলার। সেগুলো হচ্ছে- বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, হরিণা, লংগদু, নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি। অস্বাভাবিকভাবে হ্রদের পানির স্তর নিচে নামায় তৈরি হয়েছে এ সংকট- বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি টানা খরার কারণে দ্রুত কমছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে রাঙামাটিতে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, ছড়া, ঝরনা ও নদীর পানি। এতে নানামুখী সংকটে পড়েছে এ জেলার মানুষ। নেই খাবার পানি, দুর্গম উপজেলাগুলোতে বন্ধ লঞ্চ চলাচল। পানির স্তর কম থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৪টি ইউনিটও। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে এমন দুর্ভোগের চিত্র রাঙামাটিবাসীর কাছে স্বাভাবিক হলেও এবারে কষ্টের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। রাঙামাটি লংগদু উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাবুল ফরাজী বলেন, দুই মাসের অধিক সময় ধরে রাঙামাটি শহরের সঙ্গে লংগদু উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রতি বছর কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে গেলে এমন সমস্যা তৈরি হয়। এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হয় ।
এ উপজেলার বাসিন্দাদের। কারণ রাঙামাটি শহরের সঙ্গে লংগদু উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি। নৌপথই একমাত্র ভরসা। জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি মঈনউদ্দীন সেলিম জানান, বেশ কয়েক মাস আগেই রাঙামাটির সঙ্গে দুর্গম ৬টি উপজেলার লঞ্চ চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে ভেসে উঠে হাজারো ডুবোচর। যার কারণে লঞ্চ চলাচল হুমকিতে পড়ে। ড্রেজিং না হওয়ার কারণে এ সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু বৃষ্টি হলে পানি বৃদ্ধি নয়, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৬১ বছরেও ড্রেজিং না হওয়ার কারণে রাঙামাটিতে খরায় পানি সংকট। আর বর্ষায় বন্যা হবেই। দুটোতেই দুর্ভোগ। দুর্ভোগ কমাতে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। তবে কাপ্তাই হ্রদে পানি না বাড়লে এমন সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না বলছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. এ টি এম আবদুজ জাহেদ। তিনি বলেন, কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মারাত্মক আকারে উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রের পাঁচ ইউনিটের মধ্যে চালু আছে মাত্র ২টি। পিক-আওয়ারে রেশনিং পদ্ধতিতে বর্তমানে দৈনিক সর্বোচ্চ ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সংকট বাড়তে পারে। কারণ রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিকভাবে পানি থাকার কথা ৮৪ পয়েন্ট ৬০ মিন সি লেভেল (এমএসএল) কিন্তু বর্তমানে হ্রদে পানি আছে মাত্র ৭৯.৭০ ফিট এমএসএল। যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। এর চেয়ে পানি বেশি কমে গেলে বন্ধ করে দিতে হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন।