মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জে গলার কাঁটা সোয়া লাখ অটোরিকশা

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে গলার কাঁটা সোয়া লাখ অটোরিকশা

নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজটের নেপথ্যের মূল কারণ প্রায় সোয়া লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের অবাধ চলাচল। এই অটোরিকশা এখন শহরের যানজটের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে অবৈধ এই রিকশা জেলার মূল শহরে তেমন একটা প্রবেশ করতে পারছে না। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন মূল শহরে সম্পূর্ণরূপে অটোরিকশা চলাচলে বাধা দিতে শুরু করছে যা এখনো চলমান। এ মাসকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে সময়মতো বাড়ি ফিরতে পারে এ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয় পুলিশ। ফলে চলতি রমজান মাসে শহরের অবৈধ রিকশা প্রবেশে বাধায় প্রায় ৯০ ভাগ যানজটের অবসান ঘটেছে। কিন্তু শহরের অলিগলির চোরাইপথে অবাধে অটোরিকশা প্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। চোরাইপথে অটোরিকশার প্রবেশ ঠেকাতে ওসব মহল্লার অলিগলির প্রায় ১২টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। প্রতিদিনই অটোরিকশা শহরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এই বাহনের আরোহী ও চালকদের সঙ্গে দফায় দফায় বাগবিতণ্ডা হচ্ছে পুলিশের। সরেজমিন গতকাল দুপুরে দেখা যায়, শহর অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু অলিগলিতে প্রবেশের রাস্তাগুলোতে অটোরিকশার বিশাল লাইন। শহরে প্রবেশ করতে না পারলেও অলিগলি সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি করেছে এই অটোরিকশা। বিশেষ করে শহরে প্রবেশের মূল রাস্তার চোরাইপথ নারায়ণগঞ্জর সরকারি তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সড়ক। এই সড়ক দিয়ে শহরের বালুর মাঠ রাস্তা পুরোটা অটোরিকশার অবাধ চলাচলে যানজটে নাকাল অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের অলিগলি প্রত্যেকটি এলাকা যেমন গলাচিপা, মাসদাইর, ইসদাইর বাজার, আমলাপাড়া, মিশনপাড়া, খানপুর ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বিশ্বরোডে অটোরিকশার অবাধ বিচরণে যানজট সমস্যা লেগেই আছে। এ নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক ফতুল্লার মাসদাইরের বাসিন্দা মোবারক মিয়া জানান, অটোরিকশা অবৈধ হলেও এর বিক্রি কেন বৈধ করা হলো। এগুলো সব রাস্তায় না চলতে পারলে আমাদের কাছে যারা বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন। অপর মিশুক চালক টুটুল জানান, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শুধু ৫০০ এর মতো অটো গ্যারেজ আছে। পুরো নারায়ণগঞ্জে লক্ষাধিক অটোরিকশা আছে। এই অটোর ওপর নির্ভর করে প্রায় ৫-৬ লাখ মানুষের জীবিকা চলছে। এগুলো বন্ধ করার আগে দেখা উচিত যে এগুলো বিক্রি কেন হলো। সব দোষ গরিবের।

শহরের সমবায় মার্কেটের  জামাকাপড় বিক্রেতা হাফিজুর রহমান জানান,  শহরের অটোরিকশা প্রবেশে কঠোর পদেক্ষপ থাকায় পুরো শহর এখন ফাঁকা। যে শহরের ১০ মিনিটের রাস্তায় রিকশায় যেতে ৪০ মিনিট লাগত  এখন সেই সময় আর অপচয় হচ্ছে না। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, আপনারা জানেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান যানজট নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখন শহরের যানজট আছে কি নেই? তা আপনারা শহর ঘুরলেই দেখতে পাবেন। আমরা চাই মানুষ যানজট ছাড়া রমজান মাসে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে যেন পারে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সবার সহযোগিতা ছাড়া এই যানজট সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। আপাতত যানজট সমস্যা সমাধান হোক। পরে অটোরিকশার বিষয়ে কথা বলা যাবে। সম্প্রতি শহরের যানজট নিরসনে বিশেষ তদারকিতে থাকা নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের নির্দেশ ছিল রমজান মাসে যেন মানুষ সময়মতো বাসায় ফিরতে পারে। সেই নির্দেশ মতে শুধু কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে লোকবল বৃদ্ধি করে তা পরিকল্পনা প্রয়োগ করেছি। মানুষ সুফল পাচ্ছে। আপনারা তা দেখছেন। শহরের প্রত্যেকটি পয়েন্টে পুলিশ কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর