শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে ভৈরব নদ

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

অস্তিত্ব সংকটে ভৈরব নদ

বাগেরহাটে প্রভাবশালীদের দখল, অবৈধ ভবন নির্মাণ, নদের তীরে ব্যবসায়ীদের ময়লার ভাগাড়সহ নানা কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ভৈরব নদ। সাড়ে ৫০০ বছর আগে যে ভৈরব নদকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বাগেরহাটে হযরত খানজাজানের (রহ.) খলিফাতাবাদ রাজ্যের রাজধানী বাগেরহাট শহর, সেই শহরের বর্জ্য এখন ভৈরবের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট ও ক্রমাগত দখলে ক্ষীণ হয়ে গেছে নদের স্রোতধারা, পলি জমেছে নদের তলদেশে। নিরবচ্ছিন্ন দখল আর দূষণে দুঃখের শেষ নেই এ নদের। নদের দখল-দূষণ নিয়ে একেবারেই নির্লিপ্ত স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধেও। দীর্ঘদিন পরপর জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালালেও, কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না প্রভাবশালীদের দখল। একদিকে অবৈধ দোকানঘর, কাঁচাবাজার, ডেকোরেটরের মালামালসহ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য ও আসবাবপত্র রেখে দখল করে রেখেছে পুরো তীর। অন্যদিকে বাজার থেকে মুনিগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে কাঠ, ইট ও বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন নালা থেকেও বর্জ্য যাচ্ছে নদে। এ ছাড়া বধ্যভূমি, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, হোটেল-রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হয়েছে নদের জায়গা দখল করে। নদের পাশ ভরাট করে গড়ে উঠেছে মোটরসাইকেল ও অটোস্ট্যান্ড। জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকমিটির সভা, উন্নয়ন সমন্বয় সভাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় ভৈরবের দখল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভৈরব নদকে দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। তবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়া এবং প্রশাসনের সামনেই পরবর্তীতে আবারও দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয় নদের তীরে, এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের। পৌরসভার বাসিন্দা সুমন তালুকদার বলেন, শহরের পাশেই নদটি অবস্থিত হওয়ায় আমরা প্রায়ই নদের পাড়ে হাঁটতে আসি। নদের পাড়ে বসার খুব সুন্দর জায়গা আছে। কিন্তু সেগুলো বেশির ভাগই বিভিন্ন দোকানির দখলে। নদের পাড়ে বুকভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগটুকুও এখন নেই ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধের কারণে। পাবলিক টয়লেটগুলো বন্ধ থাকায় নদ ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে পয়ঃনিষ্কাশনের স্থান।

নদকে জীবন্তসত্ত্বা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাটের আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বলেন, নদ রক্ষার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট রায় রয়েছে। প্রতিটি জেলায় দখলদারদের তালিকা করার নির্দেশনাও রয়েছে ওই রায়ে। ভৈরব নদ দখলদারদের তালিকা যদি না থাকে তাহলে তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত নদকে দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ভৈরব নদের আশপাশে যারা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। ঈদের পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। এ ছাড়া নদে ময়লা-আবর্জনা ফেলে যারা দখল-দূষণের চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান জেলার এ শীর্ষ কর্মকর্তা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর