শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বছরব্যাপী চাষ হচ্ছে বারি পিঁয়াজ

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

বছরব্যাপী চাষ হচ্ছে বারি পিঁয়াজ

বারি পিঁয়াজ-৫ এখন সারা বছরই চাষ হচ্ছে কিশোরগঞ্জে। এর আগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পিঁয়াজ গ্রীষ্ম ও খরিফ মৌসুমে আবাদের জন্য অবমুক্ত করে। প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার রামপুর গ্রামে এ পিঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয় কিশোরগঞ্জ কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র। রামপুর গ্রামের ছয়জন কৃষকের তিন বিঘা জমিতে এ পিঁয়াজ চাষ করা হয়। কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র সূত্র জানায়, প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আর উৎপাদন হয় বিঘাপ্রতি দুই হাজার ৫০০ কেজি। কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ সেচ, পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে দোআঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পিঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। সাধারণত চারা তৈরি করে বারি পিঁয়াজ-৫ চাষ করা হয়। বীজ বপনের সময় অত্যধিক রোদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য পলিথিন বা চাটাই ব্যবহার করা এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বীজতলা থেকে ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। সফলভাবে পিঁয়াজ চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি প্রয়োজনীয় জৈব ও অজৈব সার ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত হেক্টরপ্রতি ৫ টন গোবর, ১৫০ কেজি ইউরিয়া, ১৭৫ কেজি এমওপি, ২০০ কেজি টিএসপি, ১০০ কেজি জিপসাম ও ১২ কেজি জিংক সালফেট ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার নিয়মানুযায়ী জমির শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও আগাম চাষের জন্য দুই তৃতীয়াংশ ইউরিয়া মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া পার্শ্বপ্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে প্রয়োজনীয় রস না থাকলে সারের পার্শ্বপ্রয়োগের পরই সেচ দিতে হবে।

 পিঁয়াজের চারা রোপণের পর একটি প্লাবন সেচ অবশ্যই দিতে হবে। মাটিতে চটা বাঁধলে কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। সেজন্য মাটির ‘জো’ আসার সঙ্গে সঙ্গে চটা ভেঙে দিতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। নিড়ানির সঙ্গে সঙ্গে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া ঢেকে দিতে হবে। পিঁয়াজের গাছ পরিপক্ব হলে এর গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায়। চারা থেকে কন্দের পরিপক্বতা হওয়া পর্যন্ত আগাম চাষের ক্ষেত্রে ৬০-৭০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে ৯৫-১১০ দিন দরকার হয়। শীতল ও ছায়াময় স্থানে ৮-১০ দিন রেখে কিউরিং করতে হবে। বর্ষাকালীন  উত্তোলনকৃত পিঁয়াজ এক মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। তবে এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে কন্দে সরাসরি রোদ না লাগে। এরপর বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক ও বায়ু চলাচলযুক্ত স্থানে পিঁয়াজ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়। কিশোরগঞ্জ কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জানান, মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করা যায়। তবে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা উৎপাদন করা উত্তম। অতঃপর ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। তিনি আরও জানান, নাবি চাষের খেতে জুলাই থেকে আগস্ট মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। পরবর্তীতে ৪০-৪৫ দিনের চাড়া মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। আগাম চাষে ৬০-৭০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে ৯৫-১১০ দিন সময় লাগে। হেক্টরপ্রতি ১৮-২০ টন ফলন পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর