বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শতভাগ বিদ্যুতে আলোকিত রাঙ্গাবালী

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

শতভাগ বিদ্যুতে আলোকিত রাঙ্গাবালী

তিন দিকে নদী। এক দিকে বঙ্গোপসাগর। মাঝেখানের দ্বীপটির নাম রাঙ্গাবালী। দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর শেষ সীমায় এর অবস্থান। নদীবেষ্টিত এই জনপদকে ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। উপজেলা ঘোষণার পরও প্রায় এক যুগ ধরে এখানে ছিল না বিদ্যুতের আলো। সন্ধ্যা নামলেই গোটা উপজেলা ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হতো। হারিকেন, ল্যাম্প ও সৌরবিদ্যুৎ ছিল একমাত্র ভরসা। অন্ধকার এই দ্বীপটি এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। পানির নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ২ লাখ মানুষের এই জনপদে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের আলোর সঙ্গে আলোকিত হয়েছে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বদলে গেছে জনপদ। যেই হাটবাজারে সন্ধ্যা নামলে মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না, সেখানে এখন সন্ধ্যা কখন হয় টের পাওয়াই মুশকিল। আলোয় ঝলমলে অবস্থার কারণে দিন-রাত একাকার হয়ে যায়। গভীর রাতেও হাটবাজার ও মহল্লায় মানুষের আনাগোনা থাকে। যেখানে মানুষের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ছিল শুধু মোটরসাইকেল নির্ভর। সেখানে এখন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মাহিন্দাসহ অন্যান্য যানবাহনে চলাচল করছে। চায়ের দোকানগুলোতে টিভি দেখার জন্য ভিড় জমে থাকে মানুষের।  ফ্রিজ, রাইসকুকার, ব্লিন্ডারসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গড়ে উঠতে শুরু হয়েছে মিল, কারখানাসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নদীনির্ভর এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ জেলে পেশায় নিয়োজিত। বরফকল না থাকায় এখানকার মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। বিদ্যুৎ আসার পরে এখানে গড়ে উঠেছে একাধিক বরফকল। মাছ শিকারি জেলেরা এখন খুব সহজেই নদীর কিনার থেকে বরফ সংগ্রহ করতে পারে। বিদ্যুতের সুবিধার কারণে সব কিছুতেই জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় বিদ্যুতায়নের প্রকল্প শুরু হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। তেতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ ও আগুনমুখা নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ভোলা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। ১৪ মাসের কর্মযজ্ঞ শেষে দুর্গম এই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১০৪টি গ্রামের ২৫ হাজার ৩৫৮টি পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৬০ কোটি টাকা। রাইস মিলের মালিক মশিউর রহমান শিমুল বলেন, বিদ্যুৎ পেয়ে আমরা রাইস মিল করেছি। মিলটি করে আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের এখানে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

মিলটি দিয়ে আমরাও লাভবান হচ্ছি। কাউখালী গ্রামের জেলে আবদুর রশিদ জানান, আমরা আগে গলাচিপা থেকে বরফ আনতাম। আমাদের অনেক খরচ হতো। বিদ্যুৎ থাকায় এখন আমরা রাঙ্গাবালীতে বসে বরফ পাচ্ছি। আমাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম হাসানুল বান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমরা সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে অনেক কম সময় দুর্গম এই উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছি। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার ৩৫৮টি পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিব বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন। তারই ফলশ্রুতিতে আমার নির্বাচনী এলাাকা দুর্গম এই রাঙ্গাবালীতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যেটা এখানকার মানুষের জন্য স্বপ্নের মতো। কেউ কোনো দিন ভাবেনি নদীবেষ্টিত এ জনপদে বিদ্যুৎ আসবে। এখন বিদ্যুতের আলোর সঙ্গে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে।

সর্বশেষ খবর