বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্লাস্টের আক্রমণে ধানে চিটা কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

ব্লাস্টের আক্রমণে ধানে চিটা কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

নড়াইলের বড় বড় বিলে বোরো ধানের খেতে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট (শীষ মরা) রোগের আক্রমণে ব্যাপক চিটা হয়েছে। অধিক লাভ ও দ্রুত কেটে ঘরে তোলার আশায় আগাম জাতের এ উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ধান চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও ধানখেত রক্ষা পায়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। ফলে ধার-দেনা করে অধিক খরচে আবাদ করে দিশাহারা কৃষকের মাথায় এখন হাত। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করা হয়। ব্রি-২৮ চাষ করা জমির মধ্যে অধিকাংশ ধানে কমবেশি চিটা হয়েছে। অনেকেই এখন জমির ধান কেটে বাড়িতে আনতে চান না বলে জানিয়েছেন। ব্রি-২৮ জাতের ধানে চিটার পরিমাণ বেশি হওয়ায় খড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না বলে ধান কাটতে অনীহা কৃষকদের। তাদের দাবি, শীষ মরা রোগে আক্রান্ত ধানের খড়ও গবাদিপশু খেতে চায় না। সরেজমিনে কালিয়া উপজেলার সর্ববৃহৎ চাঁচুড়ী, পাটেশ্বরী ও পিরোলী বিলসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রি-২৮ জাতের ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। এখন তাদের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে শুধু চিটা আর চিটা। কৃষকদের মতে, এ রোগের নাম ‘শীষ মরা’। আর কৃষি অফিসের মতে, এটি ‘নেক ব্লাস্ট’ রোগ। ব্লাস্ট রোগে ধানের শিষের নিচে কালো দাগ দেখা দেয় ও শিষ দ্রুত মরে যায়। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে বিঘা প্রতি ১৬ মণ ফলন হওয়ার পরিবর্তে সেখানে ৪/৫ মণ কোথাও কোথাও এর চেয়ে কম ফলন মিলছে। এমন অবস্থায় ধান কেটে বিক্রি করে শ্রমিকের পারিশ্রমিক মেটানোই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হচ্ছে কৃষকের। জানা গেছে, সরু জাতের ব্রি-২৮ ধানের ফলন ভালো। তাছাড়া চিকন চাল খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় উচ্চফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে ব্রি-২৮-ই স্থানীয়ভাবে বেশি জনপ্রিয়। গত প্রায় দুই দশক ধরে কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে যেমন ভালো ফলন পেয়ে আসছেন, তেমনি আগাম ঘরেও তুলতে পারছেন। কিন্তু এবার তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চাঁচুড়ী বিলের কৃষক শহীদুল হোসেন বলেন, ধান কাটা শ্রমিকের পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য মাড়াই করার পর চাঁচুড়ী বাজারের ধান ব্যবসায়ীর নিকট মাত্র ৫০০ টাকা মণ দরে সস্তায় চিটাযুক্ত ব্রি-২৮ বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু ধানে অধিক চিটা থাকায় ওই ব্যবসায়ী কেনা ধান একদিন পরেই আমাকে ফেরত দিয়েছে। এ ধান উচ্চফলনশীল ও আগাম জাতের হওয়ায় এ অঞ্চলে অনেক কৃষক এই ধান চাষ করে থাকে। কিন্তু এবারে এ ধানে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় আমাদের মতো কৃষকদের মাথায় হাত উঠছে।’ উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের অপর কৃষক রিফায়েত শেখ বলেন, ‘কালিদা বিলে এক একর জমিতে অনেক কষ্ট করে ব্রি-২৮ ধান করেছিলাম। ধান নষ্ট হয়ে চিটা পড়ে যাওয়ায় আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সামনে কী খাব তা নিয়ে আমি এখন চিন্তিত। এ ধানের খড় গরুও খেতে চায় না বলে তিনি জানান। জানতে চাইলে নড়াইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, ‘এখন যে ব্রি-২৮ ধান চাষ হয় তা বহু পুরনো জাত। এ জাতের ধানে ব্লাস্টের সংক্রমণ বেশি হয়।

তাছাড়া এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিধায় আমরা এ ধান চাষে কৃষকদের সবসময় নিরুৎসাহিত করছি। এ পুরনো জাত না চাষ করে কৃষকরা যদি আধুনিক (লেটেস্ট) নানা জাতের উচ্চফলনশীল ধান চাষ করেন তাহলে অধিক লাভবান হবেন।’

সর্বশেষ খবর