ঈদের আমেজ পড়ে গেছে চারদিকে। ঈদ আয়োজনে ঘরে ঘরে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে। আর এই ঈদের আমেজে বগুড়ার মাঠে মাঠে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ঝরঝরা রোদে ঝনঝনিয়ে ওঠা সোনালি বোরো ধান কাটছে চাষিরা। বাজারে ভালো দামের আশায় ঈদের আগে ধান কাটা মাড়াই করে হাটে তুলতে শুরু করেছে কৃষক। ধান বিক্রি করে এবার বোরো চাষিদের ঘরে ঈদের আনন্দ লেগেছে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে চলতি বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। সে কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সোয়া ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বগুড়ায়। জেলার মাঠে মাঠে এখন সোনালি রঙের ঢেউ। রোদে পুড়ে সোনালি রং ধারণ করে আছে বোরো ধান। কদিন আগেও সবুজ ধান থাকলেও এখন সোনালি রং ধরায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু হওয়ায় কৃষকের গোলায় উঠছে নতুন ধান। জেলা শহরের শাখারিয়া, মাটিডালি, শ্যামপুর, সাবগ্রাম, ইসলামপুর, নন্দীগ্রাম, ধুনট, শেরপুর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও কাহালু উপজেলায় ধানকাটা শুরু হয়েছে। বোরো ধান কেটে চাষিরা মাঠেই মাড়াই করে নিচ্ছে। ঈদ একেবারে কাছে চলে আসায় মাঠে মাড়াই করে হাটে নতুন ধান বিক্রি করে ঈদের আয়োজন সেরে নিচ্ছে। বেশিরভাগ চাষি ঈদকে সামনে রেখে সোনালি রঙের বোরো ধান কাটছে। হাটে হাটে ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ। কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৭৫ থেকে ৮০০ টাকা মণ। আর শুকনা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা মণ।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, বগুড়া জেলায় প্রতিবছর বোরো ধান চাষের পর ভালো ফলন পাওয়া যায়।
এই জেলার চাষিরা বোরো ধান চাষে অভিজ্ঞ। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি থেকে বোরোর বীজ জমিতে রোপণ শুরু হয়। পুরোদমে চলতি মৌসুমে চাষ হয়েছে। এ বছর বগুড়া অঞ্চলে শীত বেশি থাকায় বোরোর বীজ তৈরি হয়েছে ঘনকুয়াশার মধ্যে। বীজতলা তৈরির পর সময়মতো চাষ হয়েছে বগুড়ায়। যে কারণে চলতি বছর ভালো ফলনের আশা করছে চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়ার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, চলতি বছরে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে শেষ পর্যন্ত মোট আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে চাল আকারে উৎপাদন হবে ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিকটন। তবে বেশি জমি ও ভালো ফলনের কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন সোয়া ৮ লাখ মেট্রিকটন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১০ হেক্টর। আর চাল আকারে উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ১০ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। এ বছর প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া যাবে ৫ থেকে ৬ টন করে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। এবারও ভালো ফলনে ভালো দামের প্রত্যাশা করছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন হবে বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও জেলায় শেষ পর্যন্ত বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। নন্দীগ্রাম উপজেলার বোরো চাষি আজাহার মিয়া জানান, সামনে ঈদ আসছে সে কারণে বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। পরিবারের জন্য নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করতেই বোরো ধান কাটা শুরু করে হাটে বিক্রিও করা হচ্ছে। এবারে বোরো ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ঈদের খরচ বের হবে। সোনাতলা উপজেলার বোরো চাষি আবু মুসা জানান, ১০ হাজার টাকা খরচে বিঘাপ্রতি ১৮ থেকে ৩০ মণ ধান পাওয়া যায়। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ধান রোপণ শেষে এপ্রিল মাসের শেষে ধান কেটে ঘরে তুলতে হয়। কোথাও কোথাও আবার মে মাসের প্রথম থেকে ধান কাটা হয়ে থাকে। গত বৃহস্পতিবার সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ হাটে প্রতিমণ বিআর-১৮ ধান বিক্রি হয়েছে ৭৭৫ থেকে ৮০০ টাকা মণ। সদরের মাটিডালি এলাকার চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। প্রতি বছরই ভালো ফলন পাওয়া যায়, এবারো ভালো ফলনের আশায় ধান কাটা শুরু করেছেন। একদিকে কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটছে আরেকদিকে মাড়াই করে হাটে নিচ্ছে আরেক দল শ্রমিক। ঈদের আগে নগদ কিছু টাকা পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো ঈদ হয়ে যাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন জানান, ধান ও চালের মূল্য ভালো পাওয়ায় কৃষক ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারো বাম্পার ফলন হবে। তাছাড়া বগুড়া কৃষি এলাকা। প্রতি বছরই এই বোরোর বাম্পার ফলন পাওয়া যায়। আশা করা হচ্ছে এ বছরও বাম্পার ফলন হবে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এবার ঈদের আগেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। নন্দীগ্রাম উপজেলায় বেশিরভাগ ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া জেলার সোনাতলা, গাবতলী, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ধান কেনাবেচা শুরু হয়েছে।