শিরোনাম
শনিবার, ৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তিস্তা-ধরলার ভাঙনে দিশাহারা লালমনিরহাটের মানুষ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিস্তা-ধরলার ভাঙনে দিশাহারা লালমনিরহাটের মানুষ

অসময়েই ভাঙছে তিস্তা ও ধরলা। এ দুই নদীর ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের নদীপাড়ের মানুষ। ধরলা নদীর উদরে হারিয়ে যাচ্ছে সীমান্তবর্তী ‘দ্বীপচর ফলিমারী’। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দ্বীপচর ফলিমারীতে ৩০০ পরিবার বাস করছে। এসব পরিবারের লোকজন কৃষিকাজ ও ধরলা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। গেল তিন মাসে ধরলা নদীর উদরে চলে গেছে ৭০ পরিবারের বসতভিটা, একটি মসজিদ, একটি মাদরাসা ও একমাত্র বাজার। নদীগর্ভে চলে গেছে কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি। বসতভিটা হারানো পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে। দ্বীপচর ফলিমারীতে ধরলা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে আবাদি জমি ও বসতভিটা। এদিকে তিস্তার ভাঙনে একে একে বিলীন হচ্ছে সদরের খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম। গত তিন মাসে এ তিন ইউনিয়নের ৬৩টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পাশাপাশি নদীর উদরে চলে গেছে আবাদি জমি ও নানা স্থাপনা। আসমা বেগম বলেন, তার পরিবার চার দফায় বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। ছয়জনের পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে। তার স্বামী আইনুল ইসলাম ধরলা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। জমি কিনে বসতভিটা তৈরি করার সামর্থ্য তাদের নেই। ‘হামার যাবার কোনো জাগা নাই। ধরলা নদী এ্যালাং ভাইঙবার নাইকছে। ফলিমারী গ্রাম যদি নদীত চলি যায় তাকহইলে হামরাগুলা কোনঠে কোনা যামো’ তিনি বলেন। ‘ফলিমারী চরোত হামারগুলার মায়া-মমতা আছে। এই চর ছাড়ি যাবার ইচ্ছা করে না। কষ্ট হয় তাঙ হামরাগুলা এই চরোত পড়ি থাকি’ তিনি বলেন। দ্বীপচর ফলিমারী এলাকার আজগর আলী বলেন, গ্রামের মসজিদটি ধরলার উদরে চলে যাওয়ায় এখানে এখনো মসজিদ বানানো সম্ভব হয়নি। এখন নদী পাড় হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে হচ্ছে। মাদরাসাটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখানকার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ দ্বীপচরে একটি বাজার ছিল। সেখানে অনেক দোকানপাট ছিল। কিন্তু পুরো বাজারটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় দোকানপাটগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, সে কারণে এখানকার অধিবাসীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ‘হামরাগুলা নদীভাঙন থাকি বাঁইচবার জইন্যে দরখাস্ত দিয়া আইসবার নাইকছি কিন্তু এ্যালাং কোন কাজ হবার নাইকছে না’ তিনি বলেন। ‘ধরলা নদীর ভাঙন না ঠ্যাকা গ্যাইলে পুরা গ্রামটায় নদীত চলি যাইবে’ তিনি বলেন। এ দ্বীপচরের বাসিন্দা মোকসেদ আলী বলেন, ফলিমারী এলাকাটির পশ্চিমে ও উত্তরে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ধরলা নদী। একসময় এ দ্বীপচরটি অনেক আবাদি জমি ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে তা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এখন যেটুকু আবাদি জমি রয়েছে সেগুলোও বালুতে ঢাকা।

এসব জমিতে ভুট্টা ও কলাচাষ হচ্ছে। প্রতিদিন নদী ভাঙছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে দিয়েছে কিন্তু সিসি ব্লক তৈরি করে ভাঙন ঠেকানোর কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা পরিদর্শনও করেছেন কিন্তু কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে আপাতত ধরলা নদীর ভাঙন প্রাথমিকভাবে ঠেকানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এ ব্যাপারে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। নদীভাঙন স্থায়ীভাবে ঠেকানো না গেলে দ্বীপচর ফলিমারীকে রক্ষা করা কঠিন হবে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ফলিমারী এলাকাটি দ্বীপচর আর সীমান্তবর্তী হওয়ায় সিসি ব্লক দিয়ে এখানে নদীভাঙন ঠেকাতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হবে। তারপরও গুরুতপূর্ণ ৩০০ মিটার তীর রক্ষার জন্য ১ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া তিস্তার ২৫টি পয়েন্টে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর