নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ব্রজপুর গ্রামে লবা প্রামাণিকের মানসিক ভারসাম্যহীন চার ছেলেমেয়ে ও সিংসাড়া গ্রামের মন্টু শিকলমুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। তাদের পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর মানবিক মহানুভব কাজটি করেছেন আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকতেখারুল ইসলাম। জানা গেছে, ব্রজপুর গ্রামের চাল-চুলোহীন ভাঙা টিনের বেড়ার পুরনো ছাপড়ার কুঁড়ে ঘড়ে মা-বাবার সঙ্গে দিনাতিপাত করছে চার ভাইবোন। অপরদিকে সিংসাড়া গ্রামে তালাকপ্রাপ্তা মা জরিনা অসুস্থ মন্টুকে নিয়ে দুটি ছাগল বাড়িতে রেখে ও মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। শারীরিক সক্ষমতা ততটা না এলেও দুর্বল শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে সাংসারিক কাজ-কর্মে অংশ নিতে দেখা গেছে তাদের। আর কয়েক মাস নিয়মিত ওষুধ সেবন ও নিয়ম-কানুন মেনে চললে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এত কিছুর মাঝেও যখন গত ২ মে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার নিয়ে ইউএনও তাদের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন। তখন তারা শত যন্ত্রণা ভুলে উৎসবের আনন্দে অশ্রুশিক্ত নয়নে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনকে দীর্ঘজীবী করতে আল্লাহর প্রতি ফরিয়াদ করতে থাকেন। অসুস্থ পাঁচজন জানায়, হাসপাতালে ভালো ছিল। তাদের বন্ধু-বান্ধব হয়েছিল এবং একে অন্যের সঙ্গে মজার মজার গল্প ও খেলা করেছে।
এখন তারা শরীর ও হাতে-পায়ে শক্তি কম পাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় ১০ বছর শিকলবন্দি জীবনের সুবাদে তাদের স্বামী-স্ত্রী, সন্তানরা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দাদা-নানা, বাবার বাড়িতে পাড়ি জমিয়েছে। কেউবা আবার বিয়ে করে নতুনভাবে সংসার শুরু করেছে। নেয়নি অসুস্থ মানুষগুলোর কোনো খবর। নিরুপায় বাবা-মা সন্তানের চিকিৎসা ও ভরণ-পোষণে যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় ইউএনও মানসিক ভারসাম্যহীন পাঁচজনকে গত বছরের ২৫ মে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মানুষের মানবাধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। গত বছরের ২৫ মে বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার পর পাবনা মানসিক হাসপাতালে তাদের ভর্তি করি। বর্তমানে সবাই সুস্থ হয়ে বাড়িতে আছে। ডাক্তাররা তাদের সবাইকে আর কয়েক মাস ওষুধ ও বিশ্রাম নিতে বলেছেন।