সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

কাটা হচ্ছে শতবর্ষী গাছটি!

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

কাটা হচ্ছে শতবর্ষী গাছটি!

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী বাজার থেকে শুক্তগ্রাম সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে বাবরা-হাচলা ইউপি কার্যালয়ের সামনে গেলেই চোখে পড়বে শতবর্ষী একটি গাব গাছ। তবে এলাকাবাসীর কাছে এটা ‘জাইল্যা গাব গাছ’ হিসেবে পরিচিত। শতবর্ষী এই গাছটি কেটে ফেলা হচ্ছে। ডালপালা ছেঁটে পুরো গাছ কেটে ফেলার প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। দিনদুপুরে কালের সাক্ষী গাছটি কাটা হলেও সংশ্লিষ্ট কারও এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, গাছটি শত বছরের পুরনো। বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে থাকা গাছটি নিয়ে এলাকার মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। স্থানীয় কিছু লোক গাছ কাটায় আপত্তি জানালেও কেউ শোনেনি। স্থানীয়রা জানান, বাবরা-হাচলা ইউনিয়নের শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই ইউপি কার্যালয় লাগোয়া এই গাব গাছ। নড়াইল-১ আসনের সাবেক এমপি, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ প্রয়াত এস এম আবু সাঈদের পৈতৃক জমিতে প্রায় শত বছর আগে বেড়ে ওঠা এই গাব গাছ নানা ঘটনার সাক্ষী। এই গাছটি একদিকে যেমন নড়াইলের সুপরিচিত নাম এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিক প্রয়াত অধ্যক্ষ আবু সাঈদের শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পর্যন্ত নানা চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী। তদ্রƒপ, এই গাছটি বাবরা-হাচলা ইউনিয়নেরও একটি ঠিকানার নাম। এই গাছের ছায়ায় প্রতিদিন শত শত দিনমজুর, কৃষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া ক্লান্ত পথচারীরা এসে বিশ্রাম নেয়। স্থানীয় নানা ঘটনারও কালের সাক্ষী এই গাছ। আজ সেই ঐতিহ্য ও পরিবেশবান্ধব গাছটি প্রকাশ্যে কেটে ফেলা হচ্ছে। জানা গেছে, অধ্যক্ষ এস এম আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকার হিসেবে বোন জবেদা খাতুন সম্প্রতি বাবরা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মেজর কবির ও শেখ সাইফুজ্জামানের কাছে ১৬ শতক জমি বিক্রি করেন। সেই বিক্রি করা জমির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল কালের সাক্ষী এই গাব গাছটি। ক্রয়সূত্রে বর্তমান মালিক অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী ইতোমধ্যে মাত্র ১২ হাজার টাকায় শতবর্ষী এই গাছটি বিক্রি করে ফেলেছেন। তিনি ওই স্থানে একটি ক্লিনিক নির্মাণ করবেন বলে স্থানীয়রা জানান। সরেজমিন দেখা যায়, ইতোমধ্যে শতবর্ষী গাছটির বিভিন্ন অংশের ডালপালা কেটে ন্যাড়া করে রাখা হয়েছে। শতবর্ষী বিশাল আকৃতির একটি গাব গাছ কয়েকজন শ্রমিক মিলে কাটছেন। কেউ গাছের ডাল আবার কেউ বা গাছের গোড়া কাটার জন্য ইটের তৈরি বসার স্থান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। এখন শুধু অপেক্ষা মূল গাছটি কর্তনের। আবার স্থানীয় অনেকেই নীরব দর্শকের ভূমিকায় কালের সাক্ষী এই গাছ কাটার দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছেন অথবা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন। গাছ সংলগ্ন বাবরা গ্রামের বাসিন্দা মো. রাব্বী বলেন, ‘আমার দাদার বয়স ছিল প্রায় শত বছর। তিনি আমাদের কাছে এই গাছ নিয়ে অনেক গল্প বলতেন। তার মুখে শোনা তিনিই শৈশব থেকে গাছটি দেখে আসছেন এবং পূর্ব পুরুষের কাছেও এই গাছ নিয়ে অনেক গল্প শুনেছেন। তাই গাছটি কালের সাক্ষী হয়ে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে ছিল। গাছটির ছায়ার নিচে অনেক পথচারী বিশ্রাম নিত। কিন্তু বর্তমানে গাছটি কেটে ফেলার ফলে সেই দৃশ্য হয়তো আর দেখা যাবে না।

সর্বশেষ খবর