সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ভূমিহীনদের টাকা নাই, ঘর নাই

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ভূমিহীনদের টাকা নাই, ঘর নাই

হতদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের (২) ঘর বরাদ্দে টাকা না দেওয়ায় হতদরিদ্রদের ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। আশ্রয়ণদের ঘর পেতে হলে ঘরপ্রতি গুনতে হচ্ছে ২০-৫০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে ঘর পাবেন না কেউ। ফলে ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে এমনটিই বলেছেন ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. ইমান আলী। এদিকে প্রশাসন বলছে, তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের বড়দেশ্বরীতে ভূমিহীনদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৮টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই সুযোগে সদর উপজেলার ইউএনও, এসি ল্যান্ডের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভূমিহীনদের কাছে ২০-৫০ হাজার টাকা করে তুলেছে। সম্পূর্ণ টাকা দিতে না পারায় বেশ কয়েকজনকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে ঘর পাইয়ে দেয় এ মহলটি। ছাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মপুর ভদ্রপাড়া এলাকার মা-বাবা হারা এতিম সবুজ তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় তাকেও ঘর থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঘর বাতিল হওয়া ভুক্তভোগী জনি ইসলাম সদর এসি ল্যান্ডকে অভিযোগ করলে তিনি ভুক্তভোগী জনিকেই পুলিশ দিয়ে আটক করেন এবং বলেন বেশি কথা বললে অন্য মামলায় দিয়ে জেল দিয়ে দেবে বলে অভিযোগ করেন জনি। ঘর বাতিল হওয়া এতিম সবুজ জানান, আমার মা-বাবা নাই। অন্যের বাড়ির বারান্দায় রাতে ঘুমাই। ইমান মেম্বার গুচ্ছ গ্রামের আমায় একটা ঘর দেন। পরে এলাকার মিজান, কুদরত আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। মাঠে কাজ করে তাদের ৭ হাজার টাকা দেয়, বাকি টাকা দেয়নি বলে ঘর থেকে আমাকে বের করে দেয়। প্রতিবন্ধী রহিমা অভিযোগ করে বলেন, কুদরত, মিজান আমাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে তারা আমাদের ঘরের তালা ভেঙে আসবাবপত্র বের করে দিয়ে অন্যজনকে তুলে দেয়। আমার ঘরও গেল আসবাবপত্রও গেল। আমি বিচার চাই। 

ঢোলারহাট ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমান আলী জানান, আমার ওয়ার্ডে সাতজনকে গুচ্ছ গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যাদের বের করে দেওয়া হয়েছে তারা গরিব ও ভূমিহীন। অন্যের বাড়িতে রাত কাটান। এখন শুনতেছি একটি প্রভাবশালী মহল নাকি টাকা দাবি করছে। টাকা দিতে পারেনি বলে তাদের ঘর বাতিল। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি সঠিক তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রকৃত ভূমিহীনদের যেন তাদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের ঘর দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ৭০ ভাগ মানুষ থাকে না। এসি ল্যান্ডের সহকারী এসে তালিকা করে তাদের ঘর বাতিল করেছে। এ সময় এসি ল্যান্ড আমাদের ডেকে বলেন ঘর খালি আছে নাম দেন। ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দকৃত ঘরগুলো বাতিল কেন করা হলো এ প্রসঙ্গে সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার বলেন, কারও ঘর বাতিল করা হয়নি। যারা অভিযোগ করছে তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। জনি নামে এক যুবককে বিনা কারণে পুলিশ দিয়ে আটক করেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। কেউ যদি ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর