শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

গলার কাঁটা ইজিবাইক

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

গলার কাঁটা ইজিবাইক

ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশার যানজটে নাকাল নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জবাসী। যেখানে সেখানে ইচ্ছে হলেই অঘোষিত স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো করায় মূল সড়কগুলোতে যানজট লেগে থাকে। পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতে এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। জানা যায়, এসব যান শুরুতে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও পরে সংখ্যার দিক থেকে বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনেও মহাভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার চালকদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চালক শিশু-কিশোর। সঠিকভাবে যানগুলোর ব্যাটারি চার্জ করা হয় না। চোরাই বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ করা হয়। প্রতিটি ইজিবাইকে ১২ ভোল্টের তিনটি হেভি ব্যাটারি থাকে এবং প্রতিদিন দুবার করে চার্জ দিতে হয়। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ ওয়াট হিসাবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। এর ফলে সরকারি বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সনাতনী লিড অ্যাসিডের ব্যাটারির রিসাইকেল সেন্টার নেই। ফলে ব্যবহার শেষে ব্যাটারিগুলো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে; যা পরিবেশ ও মানবজীবনের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এদিকে চালকদের দাবি, শহরের ভিতরে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। বৈধ স্ট্যান্ড বা ফাঁকা কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁদের রাস্তার ওপরেই ইজিবাইকগুলো দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। এ ছাড়া বৈধ ইজিবাইকের বাইরেও শহরে অবৈধভাবে কিছু ইজিবাইক চলাচল করে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শিমরাইল মোড়, সিদ্ধিরগঞ্জপুল, পাওয়ার হাউস, আদমজী ইপিজেড, আদমজীনগর সোনামিয়া মার্কেট, গোদনাইল, চৌধুরীবাড়ী স্ট্যান্ডসহ সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ এসব ইজিবাইকের কারণে যানজট লেগেই আছে। এসব ইজিবাইকগুলোর বেপরোয়া গতিতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা থাকায় ব্যাটারি চালিত অবৈধ এসব যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এখন ইজিবাইকগুলো জনসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ইজিবাইক বন্ধে মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করলেও আঞ্চলিক সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ এসব ইজিবাইক। আজিজুল হাকিম নামে এলাকার এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সড়কের মোড়গুলোতে গোলচত্বর বা ইউটার্ন না থাকায় যেখানে-সেখানে সড়কের ওপর ইজিবাইকগুলো ইচ্ছেমতো ঘোরানো হচ্ছে। সিগন্যাল ছাড়াই হঠাৎ করে রাস্তায় গাড়ি ঘোরানোর ফলে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ইজিবাইকচালকদের এসব নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মারামারির ঘটনাও ঘটে। ইজিবাইক চালান এমন দুজন রহিম মিয়া ও তৌকির আহমেদ বলেন, অবৈধ ইজিবাইকের বিষয়ে কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শহরে গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে যাবে। ফলে যানজট সমস্যাও কমে আসবে। হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দা সাকিব আহমেদ জানান, আমাদের এলাকায় মানুষের তুলনায় ইজিবাইকের সংখ্যাই বেশি হবে। রাস্তায় বের হলে আতঙ্কে থাকি কখন যে দুর্ঘটনার শিকার হই।

মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় যখন থেকে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চলাচল শুরু করেছিল তখন ভেবেছিলাম আমাদের চলাচলে অনেক সুবিধা হবে। এখন দেখি হিতে বিপরীত হয়েছে। ইজিবাইকের সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজটের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে শব্দদূষণ হচ্ছে। বিকেএমইএর পরিচালক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আমাদের নগরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশা। ব্যাটারি চালিত এ অযান্ত্রিক যান একদিকে দেশের সম্পদ বিদ্যুৎ চুরি করছে। অন্যদিকে যানজটের কারণে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রমিকদের কর্ম সময় নষ্ট হচ্ছে। এগুলোকে একটা সিস্টেমে আনা প্রয়োজন। না হলে সামনের দিনগুলোতে রাস্তা দিয়ে আর যানবহন চলাচলা করা যবে না। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) আবদুর করিম শেখ জানান, দিন দিন ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। আদমজী ইপিজেড সড়কে যানজটের মূল কারণ হচ্ছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশা।

 

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর