শনিবার, ১৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইন্দোনেশিয়ার ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষ হচ্ছে নড়াইলে

নড়াইল প্রতিনিধি

ইন্দোনেশিয়ার ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষ হচ্ছে নড়াইলে

প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি আর ঔষধি গুণ-সমৃদ্ধ ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো চালের ধান’ এবারই প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে নড়াইল জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ইতোমধ্যে এ জাতের ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর ও বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারণে এ ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ ধান খেতে থাকতেই বীজ হিসেবে কেনার জন্য স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে। এ নিয়ে জেলায় রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের নিকট সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কৃষি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এ ধানগাছের পাতা ও কান্ডে র রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। দেশে প্রথম কালো চালের ধানের আবাদ শুরু হয় কুমিল্লায়। জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ায় ‘ব্ল্যাক রাইস’ ধানের উপত্তি হলেও অধিক ঔষধি ও পুষ্টিগুণের কারণে চীন দেশের রাজা-বাদশাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গোপনে এ ধান চাষ করা হতো। যা প্রজাদের জন্য চাষ করা বা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে একে নিষিদ্ধ ধান বা চালও বলা হয়। পরবর্তীতে জাপান, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ধান চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এ ধান আসে বাংলাদেশে। পার্বত্য এলাকায় এ চালকে বলা হয় পোড়া বিন্নি চাল। থাইল্যান্ডে একে বলে কাও নাইও          ডাহম। সাধারণ অন্যান্য ধানের মতো চাষ পদ্ধতি। এ কালো ধান গাছের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৪ ফুট। এর পাতা, শীষ, ধান ও চাল সবকিছুই কালো।

ব্ল্যাক রাইস চাষ অন্য ধান চাষের মতোই। এতে কোনো অতিরিক্ত সার বা পানির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না আলাদা কোনো পরিচর্যার। এর এক কেজি চালের মূল্য ৮০০ টাকা।’ তিনি আরও জানান,‘ খেতে ধান দেখেই বীজ নেওয়ার জন্য অনেকেই বুকিং দিয়েছেন। ঔষধি ও পুষ্টি গুণের কারণে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে এ জেলায় আরও কয়েজন কৃষক এ ধানের আবাদ করেছেন। আগামীতে কালো ধানের চাষ এ জেলায় আরও বৃদ্ধি হবে বলে জানান তিনি।’ কৃষি বিভাগ জানায়, এই চালের খাদ্য গুণ অনেক। রয়েছে ঔষধি গুণও। ১১টি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে এতে। কপার, জিংক, ফাইবারের মাত্রাও বেশ। কার্বোহাইড্রেড অন্তত কম বলে ডায়াবেটিসের রোগীরাও তা খেতে পারেন। তাছাড়া কালো ধানে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিজেন থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরাধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। এটি ক্যান্সার ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, স্মরণশক্তি বৃদ্ধিসহ বার্ধক্য, রক্তবৃদ্ধি ও কিডনি-লিভার সুস্থ রাখে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নড়াইল কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) দীপক কুমার রায় বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালো চালের ধানের চাষ হলেও এ জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে এটাই প্রথম চাষ হচ্ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত সরকারি পর্যায় থেকে এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়নি। তবুও আমরা এগুলো খেয়াল করছি যে, প্রাথমিকভাবে এর অবস্থা অনেক ভালো। এ ধান চাষে কৃষকরা কতটা লাভবান হবেন, ফলন কী রকম হয়, সেসব বিষয় পরীক্ষা করে পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসাসংক্রান্ত গুণাগুণের জন্য ‘ব্ল্যাক রাইস’ চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়।

সর্বশেষ খবর