রবিবার, ১৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তিস্তা বাঁচাতে কনভেনশন

নিজস্ব অর্থায়নে মহাপরিকল্পনা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তা বাঁচাতে কনভেনশন

তিস্তা নদী খনন ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তিস্তা চুক্তি সইসহ ছয় দফা দাবিতে তিস্তার পাড়ে কনভেনশন করেছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। গতকাল দুপুরে তিস্তা ব্রিজ এলাকায় লালমনিরহাটের তিস্তা ডিগ্রি কলেজ মাঠে কনভেনশনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা। গতকাল দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া এ কনভেনশনে যোগ দেন তিস্তাপাড়ের ৩২০ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন কবলিত হাজার হাজার মানুষ। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়নে রংপুর বিভাগের তিস্তা পাড়ের মানুষেরা এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন। তিস্তার দুই পাড়ে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্দার পাড়ের লোকজন সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকে কনভেনশন মাঠে। বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন জেলার মানুষজন বৃষ্টিতে ভিজে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তিস্তা কলেজ মাঠ। লোকজনের দাবি, তিস্তার কড়াল গ্রাসে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। বাপ দাদার ভিটেমাটিটুকু হারিয়ে নিস্ব এসব লোক অতিসত্তর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ও তিস্তা চুক্তি সইয়ের দাবি জানান। কনভেনশনের মূল পত্র উপস্থাপনে রিভারাইন পিপলস এর পরিচালক ও নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তার ভাঙনে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের দীর্ঘশ্বাসে তিস্তাপাড়ের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। এসব মানুষের করুণ কান্নার সুর ভেসে বেড়ায় তিস্তা পাড়ে। এর কারণ যতটা না প্রাকৃতিক চেয়ে ঢের বেশি মনুষ্য সৃষ্টি। সরকার পরম্পরায় এ দায় কেউ এড়াতে পারে না। এসব অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তিস্তাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিচর্যা জরুরি। দুই তীর সংরক্ষণ ও নদীর গভীরতা বাড়ালে বন্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। রংপুর বিভাগে অতিদরিদ্রের প্রধান কারণ এই তিস্তা। এর প্রতিকার না করলে এ অঞ্চলের দরিদ্রতা দূর হবে না। সমীক্ষায় দেখা গেছে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রতি বছর বাড়তি কোনো উৎপাদন ছাড়াই সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থমূল্যের সম্পদ রক্ষা পাবে। সাংবিধানিকভাবে অনগ্রসর অঞ্চলকে বিশেষ সুবিধার কথা বলা হলেও যদি সমতাভিত্তিক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা হলে রংপুরে ২ কোটি মানুষের জন্য অন্তত ৩৭ হাজার কোটি টাকার ন্যূনতম একটি বা একাধিক প্রকল্প থাকার কথা। কিন্তু দেশে ৩ লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প চললেও এই অঞ্চলে একটিও নাই। সংগঠনটির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, তিস্তা নদীকে বলা হয় উত্তরের জীবন রেখা। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এ নদীর ওপর দেশের ২ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। এ নদী এবং নদীপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য দেশীয় এবং আন্তদেশীয় ব্যবস্থাপনা জরুরি। তিনি আরও বলেন, এই এলাকার মানুষদের বাঁচাতে তিস্তা চুক্তি সই এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা, ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, কৃষক সমবায় ও কৃষিভিত্তক শিল্প কলকারখানা, তিস্তার শাখা-প্রশাখা ও উপশাখার আগের অবস্থায় সংযোগ স্থাপন এবং দখল ও দূষণমুক্ত করে নৌ চলাচল চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। পদ্মা সেতুর মতো করে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে বিভাগের মানুষদের দুঃখ ঘুচবে। স্বাবলম্বী হয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষি ফসল বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। তিনি বলেন, দেশের ১০টি দরিদ্র জেলার মধ্যে ৫টি এই বিভাগের। যার মূল কারণ তিস্তার নদী ভাঙন। এটি ঠেকানো গেলে উত্তরের জীবনমানের উন্নয়ন সাধিত হবে। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে হরতাল অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন দিতে বাধ্য হব। স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও মাত্র সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প ২ বছর থেকে ঝুলে আছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চায়নার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা করলেও কূটনৈতিক জটিলতায় তা আটকে আছে। তাই আমরা চাই এসব জটিলতা বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক। তিস্তা খননের এই প্রকল্পটি আগামী বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবেন বলেও জানান তিনি। কনভেনশনে অন্যান্যদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু, রাজারহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নুর মো. আক্তারুজ্জামান, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুজ্জামান খান, তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক, সাদেকুল ইসলাম, তিস্তা কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সাজু সরকার, রাজারহাটের ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর