রবিবার, ১৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইটভাটায় কপাল পুড়ল ৩০০ কৃষকের

বিষাক্ত গ্যাসে নষ্ট হয়েছে ৫০০ বিঘার ধান

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

ইটভাটায় কপাল পুড়ল ৩০০ কৃষকের

ধামরাইয়ের বালিয়া-মাদারপুর এলাকায় ফসলি জমির পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ে গেছে ধামরাই সদর ইউনিয়নের গুতুল, হাজীপুর, চন্দ্রপাড়া, নওগাঁও, ডেমরান, মধুডাঙ্গা, জালসা ও বালিয়া-মাদারপুর এলাকার ৫০০ বিঘা বোরো খেত। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তিন শতাধিক কৃষক। চিটা হয়ে যাওয়া এসব ধান জমি থেকে কেটে বাড়িও নিচ্ছে না তারা। জমিতেই ন্যুয়ে পড়ে পচে যাচ্ছে গাছ। কৃষকরা জানিয়েছেন, ভাটা মালিকরা ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত ধান কাটবেন না। ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন তারা। ধামরাইয়ের বালিয়া-মাদারপুর এলাকায় গতকাল গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তিনটি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে দুটি ভাটার চুলার আগুন কয়েকদিন আগে বন্ধ করে গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর একটিতে এখনো ইট পোড়ানো চলছে।

এসব ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে চারপাশের জমির ধান ঝলসে চিটা হয়ে গেছে। মাদারপুর গ্রামের কৃষক জুয়েল রানা বলেন, এ বছর তিনি ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। এই জমির ধান দিয়েই ছয় সদস্যের পরিবারের সারা বছর চলে। ভাটার গ্যাসে তার খেতের সব ধান চিটা হয়ে গেছে। এখন কিভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তায় ঘুম হয় না। শুধু জুয়েলই নয়, তার মতো একই এলাকার চান মিয়ার ৫০, আব্দুস সোবহানের ৩৫, আব্দুস সামাদের ২৫, মঞ্জুর রহমানের ৫৫, বাচ্চু মিয়ার ৪০ ও ধলু মিয়ার ৪২ শতাংশসহ ওই এলাকারই ৯৫ জন কৃষকের ধান ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ঝলসে গেছে। চান মিয়া, জুয়েল রানাসহ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করায় ইটভাটা মালিকরা তাদের এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন। এদিকে মধুডাঙ্গা ও জালসা এলাকার ১৩০ বিঘা এবং ধামরাই সদর, সোমভাগ ও ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের গুতুল, হাজীপুর, চন্দ্রপাড়া, নওগাঁও ও ডেমরান গ্রামের শতাধিক কৃষকের ৩০০ বিঘার বোরো খেত ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে চিটা হয়ে গেছে। তারাও ক্ষতিপূরণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কৃষি কর্মকর্তার অফিসের সামনে মানববন্ধন করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মাদারপুর এলাকার এমপিবি-১ ব্রিকসের মালিক শাজাহান মিয়া বলেন, শুধু ভাটার গ্যাসেই ধানের ক্ষতি হয়নি, ভাইরাসের কারণেও ক্ষতি হয়েছে। তারপরও কৃষকরা যেহেতু অভিযোগ করেছেন বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ধানের ক্ষতি হওয়ার বিষয়ে ১০-১২ গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ইউএনওসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দুটি ভাটা মালিককে বলা হয়েছে। ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না দিলে ওইসব ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর