সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

খুঁড়িয়ে চলছে নাটোর হাসপাতাল

নাটোর প্রতিনিধি

খুঁড়িয়ে চলছে নাটোর হাসপাতাল

প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল। চিকিৎসক ও দক্ষ জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রাপাতি। চরম বিপাকে সাধারণ রোগীরা।

জানা গেছে, দুই বছর আগে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। শুরু হয়নি ২৫০ শয্যার কার্যক্রম। হাসপাতালটি বর্তমানে ১০০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ৫০ শয্যারও কম। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন চিকিৎসক সংকট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিসহ নানা সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতালে দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় করা যাচ্ছে না আলট্রাসনোগ্রাম ও উন্নতমানের পরীক্ষা, নষ্ট হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। রোগীদের অভিযোগ চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগীও দেখেন না। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট কাজ করেন। তাই বেলা ১২টার পর আর কোনো পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো ও সাপে দংশনের ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে দুপুর ১টার পর আর দেওয়া হয় না। সদর উপজেলার বাসিন্দা চিকিৎসা নিতে আসা সুমাইয়া জানান, সকাল ৮টা থেকে ছয় মাসের শিশুকে নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে বসে আছি। দুপুর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি। নলডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুর থেকে আসা মারিয়া বেগম জানান, প্রাইভেটে চিকিৎসা খরচ বেশি। তাই পাঁচ টাকার টিকিট কেটে সকাল থেকে বসে আছি। তিন ঘণ্টা পার হলেও দেখা নেই চিকিৎসকের। হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে আসা কাদের আলী জানান, চিকিৎসক ভিতরে বসে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করছেন। আর মাঝে মধ্যে একজন করে রোগী দেখছেন। গলার ব্যথায় কাতর সাহানুর বেগম আবাসিক অফিসার (চলতি দায়িত্ব) ডা. এম এ মোমিনের চেম্বারের সামনে দরজায় বসে আছেন দুই ঘণ্টা। বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে প্রতিবেদককে জানান, ডাক্তার মিটিং করছেন। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগী পার্বতী রানী জানান, দুই দিন হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছি। শয্যা না পাওয়ায় বারান্দার জায়গা হয়েছে। কিন্তু মেঝেতে আছি তাই চিকিৎসকেরা পরামর্শ না দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। এখন কী করব? সদর উপজেলার কাফুরিয়া থেকে শিশু ফাহিমকে নিয়ে গতকাল সকালে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন কেয়া। সব সেবা ঠিকমতো দিলেও রাইচ স্যালাইন ও বায়োকিট নামে দুটি ওষুধ বাহির থেকে কিনেছেন। শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ চন্দনা দেব নাথ বলেন, যে সব ওষুধের সরবরাহ নেই শুধু সেই ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়। ওয়ার্ডে ১৪ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৪ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৬ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গত সাত দিনে ১১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীর চাপ নেই। বহিঃবিভাগে রোগী দেখিয়ে ফার্মেসিতে ওষুধ নিতে আসা সেলিম বলেন, প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক দুই পাতা করে মোট চার ধরনের ওষুধের নাম লিখেছেন। আর ওষুধ পেয়েছি এক পাতা করে। চাইলে বলে আর নেই। শহরের মল্লিকহাটি এলাকার সাহানা খাতুন বলেন, আমাকে শুধু পাঁচটি করে ওষুধ দিয়েছে। বাকি ওষুধ কোথায় পাব। হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জ রেবেকা সুলতানা বলেন, ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় রোগীদের কম করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে চাহিদা মতো দেওয়া হবে। হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরের দায়িত্বে থাকা ডোম জয় কুমার বলেন, পুরাতন ব্লেড, কাঁচি ও ছেনি দিয়ে লাশের কাটা ছেঁড়া করতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে।

সর্বশেষ খবর