বুধবার, ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন

কুষ্টিয়ায় সবুজ ও সোনালি ধানের দোলায় দুলছে হাজারও কৃষকের স্বপ্ন। এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কুষ্টিয়ার হাজারও কৃষক। জেলার ৬টি উপজেলায় চলতি বোরো  মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।  আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাঠের ধান ঘরে তোলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।

তবে ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র কারণে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকদের ধান কাটা কিছুটা বিঘ্নিত ও দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিলেও এর প্রভাব তেমন একটা পড়েনি কুষ্টিয়ায়। পাকা ধান পুরোদমে কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৩৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেখানে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ২১৫  হেক্টর জমিতে। এছাড়া উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৮ মেট্রিকটন ধান। এ বছর ফলন বেশ ভালো হওয়ার আশা রয়েছে কৃষি বিভাগের। সেই সঙ্গে গত আউশ ও আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক আবাদ করে কৃষকরা। আউশে ২৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি অফিস। সেখানে কৃষকরা চাষ করে ২৮ হাজার ১২৫ হেক্টর। আমনে ৮৮ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি অফিস। সেখানে কৃষকরা চাষ করে ৮৮ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। জেলার মিরপুর উপজেলার কৃষক আরিফ ম ল বলেন, জেলায় এবার বোরো ধান আবাদে সারের কোনো ঘাটতি হয়নি। ধানের ফলন যেমন ভালো, দামও বেশ। বর্তমানে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধানের দাম সন্তোষজনক হওয়ায় আমরা খুশি। কৃষক জামিরুল ইসলাম জানান, দুই একর ২২ শতক জমিতে ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭২ শতক জমি নিজের। ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র কারণে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধান কাটা কিছুটা বিঘ্নিত ও দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিলেও এর প্রভাব তেমন একটা পড়েনি আমাদের এলাকায়। এ বছর ধানের ফলন  যেমন ভালো, দামও বেশ ভালো। দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে কৃষকরা আরও বেশি ধান আবাদ করবেন বলে জানান।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, বোরো ধানের জমিতে সেচ খরচ বেশি হওয়ার কারণে কৃষকরা বোরো চাষে আগ্রহ হারাতো। তবে এ বছর আবারও কৃষকরা বোরো ধান চাষে ঝুকছে। মিরপুর উপজেলার অধিকাংশ কৃষি জমি জিকে সেচ প্রকল্পের পানি সেচে ধানের আবাদ হয়। যার ফলে কম খরচে ধানের আবাদ করছেন কৃষকরা। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস  থেকে এ বছর বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৩০০ কৃষককে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) এবং ৪ হাজার ৮৩০ জন কৃষকের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, এ বছর  জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সময় মতো বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণ ঠিকমতো পাওয়ায় ধান চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। এ বছর কৃষকদের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯৫ ভাগের বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র  প্রভাবে কুষ্টিয়ায় কিছু চাষি কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়লেও তেমন একটা সমস্যা হয়নি বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে ৫ থেকে ১০ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে মৌসুমের শুরুতে কুষ্টিয়ার বাজারে ৮৬০ টাকা মণ দরে বোরো ধান বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বাজারে বোরো ধান ৯৬০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর